দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়াসহ ৪৭ সুপারিশ

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) শক্তিশালী করতে যে ৪৭ সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন, তাতে প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া এবং দুদকের নিজস্ব তহবিলের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পরে বিকালে সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে ড. ইফতেখারুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় কমিশনের অন্য সদস্যরাও সেখানে ছিলেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। একে কার্যকর ও গতিশীল করতে তিন সদস্যের কমিশনকে যথেষ্ট মনে করছে না সংস্কার কমিশন। তাই তিন সদস্যের পরিবর্তে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।
পাঁচ সদস্যের কমিশনে একজন নারী সদস্য যুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে দুদকের কাজের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে এমন বিচারিক ও ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো অভিজ্ঞদের যুক্ত করা এবং কমিশনের মেয়াদ পাঁচ থেকে কমিয়ে চার বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
দুদকের নিজস্ব তহবিলের বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকার অনুমোদিত বাৎসরিক বাজেটের অর্থ দুদকের তহবিলে জমা হবে। পাশাপাশি দুদকের মামলায় আদায়কৃত জরিমানা বা বাজেয়াপ্তকৃত অর্থের ন্যূনতম ১০ শতাংশ তহবিলে জমা হবে। কমিশন গঠনে যে দুদক আইনে সার্চ কমিটির কথা বলা হয়েছে, সেটি পরিবর্তন করে ‘বাছাই ও পর্যবেক্ষক কমিটি’ করার সুপারিশ করা হয়েছে। দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনা এড়াতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বাদ দিয়ে তারপরে যিনি সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ হবেন, তিনি হবেন বাছাই কমিটির প্রধান।
সংস্কার কমিশন তিনটি পদ্ধতির কথা সুপারিশ করেছে, একটি হলো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ‘শর্ত পূরণ’ সাপেক্ষে যে কেউ চাইলে কমিশনার হতে আবেদন করতে পারবেন বা ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, ‘বাছাই ও পর্যবেক্ষক’ কমিটি চাইলে বাছাই করে প্রার্থীর তালিকা তৈরি করতে পারবে। তৃতীয় হলো, কেউ চাইলে প্রার্থী মনোনীত করতে পারবেন।
দুদকের বিতর্কিত চাকরিবিধি ৫৪এর ২ ধারা বাতিল, সচিব পদ থেকে নিচের দিকের পদগুলোতে নিয়োগ-পদায়নে কমিশনের আইনের বড় পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে সচিব নিয়োগ, মহাপরিচালক পদে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা থেকে ৬০ শতাংশ পদায়ন ও পদোন্নতি, পরিচালক পদে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা ৭৫ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
দুদক আইনে স্বাধীন প্রসিকিউশনের কথা বলা থাকলেও সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার দুই দশকে তা হয়নি। এ বিষয়ে সংস্কার কমিশন একটি দীর্ঘ পরিকল্পনা তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে, যেখানে ১০ থেকে ২০ শতাংশ নিজস্ব কর্মীর মাধ্যমে প্রসিকিউশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। পরে ক্রমান্বয়ে তা বাড়িয়ে নিজস্ব প্রসিকিউশন টিম গঠন করা হবে।
একইভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের যে পূর্বানুমতির বিধান করা হয়েছিল, সেটি পুরোপুরি বিলুপ্তি করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশনের কাজের পরিধি বাড়াতে ৩৬ জেলা কার্যালয়ের পরিবর্তে প্রতিটি জেলায় দুদকের কার্যালয় চালু করতে হবে।
কমিশন গঠনের পর বাছাই কমিটি দেখবে দুদক কী করল, কোন মামলাগুলো কী কারণে নেওয়া হলো, কী কারণে নেওয়া হলো না। কমিশন ছয় মাস পর পর এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে। এই পর্যালোচনাগুলো নিয়ে পড়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সুপারিশ করা হয়েছে দুদকে শৃঙ্খলা অনুবিভাগ রাখার।
দুদকের যাচাইবাছাই কমিটি (যাবাক) নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। তাই এই কমিটিও সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
দুদকের জেলা বা বিভাগীয় কার্যালয়ের এই কমিটির সুপারিশ পুনরায় প্রধান কার্যালয়ের যাবাকের মাধ্যমে যাচাইবাছাই না করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যাবাকে তিন সদস্যের মধ্যে একের অধিক প্রেষণে নিযুক্ত কর্মকর্তা না রাখার কথাও বলেছে সংস্কার কমিশন।
দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য স্বল্প (৬ মাস), মধ্যম (১৮ মাস) ও দীর্ঘমেয়াদি (৪৮ মাস) পথরেখার প্রস্তাবও করা হয়েছে।