পূর্বদেশ ডেস্ক
৪৫তম জাপানি ওডিএ ঋণ প্যাকেজ (১ম ব্যাচ) এর আওতায় দুটি প্রকল্প, ‘যমুনা রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প (৩য় কিস্তি)’ এবং ‘চট্টগ্রাম স্যুয়ারেজ সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস)’-এর জন্য মোট ৩৯ হাজার ৯০২ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন (প্রায় ২৪৮.৮৮ মিলিয়ন ডলার) দেবে জাপান।
গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এনইসি-২ কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ সরকার এবং জাপান সরকারের মধ্যে এই ‘এক্সচেঞ্জ অব নোট’ এবং ‘ঋণ চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ‘এক্সচেঞ্জ অব নোট’ এবং ‘ঋণ চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন।
বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি ‘নাট বিনিময়’ সই করেছেন এবং জাইকা বাংলাদেশ অফিসের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তমোহিদে জাপান সরকারের পক্ষে ‘ঋণ চুক্তি’ সই করেছেন।
ইআরডির প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, যমুনা রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প (৩য় কিস্তি): চলমান প্রকল্পের মোট খরচ ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা (বাংলাদেশ সরকার ৪ হাজার ৬৩১ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা এবং জাইকা ১২ হাজার ১৪৯ দশমিক ২০ কোটি টাকা)। প্রকল্পের বাস্তবায়ন সময়কাল জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত। এই প্রকল্পের জন্য জাপান ইতোমধ্যেই ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৭ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন দিয়েছে।
৩য় কিস্তির আওতায় জাপান ৩৮ হাজার ২০৬ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন (প্রায় ২৩৭ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ডলার / প্রায় ২ হাজার ৯৪৬ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা) দেবে। এই কিস্তির সুদের হার ১ দশমিক ৭০ শতাংশ নির্মাণের জন্য, শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ পরামর্শক সেবার জন্য এবং এককালীন ফ্রন্ট এন্ড ফি শূন্য দশমিক ২ শতাংশ থাকবে। ঋণ শোধের সময়কাল ৩০ বছর, যার মধ্যে ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ড থাকবে।
ইআরডি জানিয়েছে, চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প (প্রকৌশল সেবা): পয়ঃনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, পাম্পিং স্টেশন এবং পাইপলাইন ইত্যাদির মতো পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা উন্নয়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীতে একটি উপযুক্ত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা (ক্যাচমেন্ট ২ ও ৪) উন্নীত করা এবং জীবনযাত্রার মান ও স্যানিটারি অবস্থার উন্নতি এবং জলজ পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান রাখা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
প্রকল্পের মোট খরচ ৫ হাজার ১৫২ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা (বাংলাদেশ সরকার ৫৮১ দশমিক ৫৭ কোটি টাকা, জাইকা ৪ হাজার ১৪৪ দশমিক ২৮ কোটি টাকা, সিডব্লিউএএসএ ৩৯ কোটি টাকা)। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সময়কাল জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০৩২ পর্যন্ত।
জাপান সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে এ প্রকল্পের জন্য ঋণ দেবে। এই ইঞ্জিনিয়ারিং সেবা ঋণের জন্য জাপান সরকার ১ হাজার ৬৯৬ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন (প্রায় ১১ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার/ প্রায় ১৩০ দশমিক ৮০ কোটি টাকা) দেবে। এই ঋণের সুদের হার শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ, ফ্রন্ট এন্ড ফি (একবার) শূন্য দশমিক ২ শতাংশ এবং পরিশোধের সময়সীমা হবে ৩০ বছর যার মধ্যে ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডও রয়েছে।
বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার জাপান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে জাপান বাংলাদেশে সামাজিক-আর্থিক উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে। বর্তমানে জাপানের ওডিএ প্রতিশ্রæতি ৩২ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিদ্যুৎ, সড়ক, সেতু, টেলিযোগাযোগ, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, পল্লী উন্নয়ন, পরিবেশ, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানি ঋণ ও অনুদান ব্যবহার করা হয়েছে। জাপানি সহায়তা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।