দিনে গ্যাস থাকছে না বেশিরভাগ এলাকায়

2

মনিরুল ইসলাম মুন্না

তীব্র গ্যাস সংকটে ভুগছেন নগরীর বাসিন্দারা। অনেক এলাকায় দিনভর গ্যাস থাকছে না। বিকালে বা সন্ধ্যায় চুলা জ্বলে। তাই বাধ্য হয়ে বাসিন্দারা দিনের খাবার রাতে রান্না করে রাখছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার চান্দগাঁও, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
দেখা গেছে, লাইনের গ্যাসে রান্না করতে না পেরে কেউ সিলিন্ডার কিনে এনেছেন, কেউ ইলেক্ট্রিক ইন্ডাকশন চুলা আবার কেউ মাটির চুলায় রান্না করছেন। বেশির ভাগ বাসায় ভাড়ার সঙ্গে গ্যাসের বিলও দিতে হয়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, লাইনের গ্যাসের সংযোগ থাকার পরও অনেক বাসায় বাড়তি এলপিজি’র সিলিন্ডার অথবা ইন্ডাকশন চুলা রাখতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
বাকলিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা মেলে অনেকেই রান্না করছেন মাটির চুলায়। লাইনের গ্যাস না থাকায় হোটেলগুলোতে ভিড় বেড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় গ্যাস থাকলেও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় চাপ কম।
তবে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শফিউল আজম খান বলেন, ‘এখন গ্যাস সংকট নেই। হয়তো কোথাও কাজ করা হলে আমরা ওই ফিডারের লাইন বন্ধ করে রাখি। তাই হয়তো সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে।’
তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন ভিন্ন কথা। একই লাইনে প্রতিদিন মেরামত করতে হবে কেন? প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্যাস পাই না।
কথা হয় বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকার শাহ আমানত হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা মরিয়ম খাতুন রোজির সাথে। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্যাস পাই না। বিকল্প হিসেবে ইলেক্ট্রিক ইন্ডাকশন চুলায় রান্না করতে হয়। এতে রান্নায় ডাবল খরচ যাচ্ছে আমাদের।’
একই অভিযোগ করেন লায়লা আক্তার। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের অবস্থা বলার মতো না। রান্না করতে পারছি না। যে চাপ তাতে রান্না করা যায় না। এই আসে গ্যাস আবার চলে যায়। উপায় না পেয়ে টিনের পাত্র দিয়ে চুলা বানিয়ে রান্না করছি। রান্না না করলে সবাই না খেয়ে থাকবে, নয়তো হোটেলে খেতে হবে।’
বহদ্দারহাটে চাকরিজীবী মো. আনিছ বলেন, ‘আমি নিজে রান্না করে খাই। গ্যাসের সমস্যার জন্য হোটেলে খাচ্ছি। যেটুকু গ্যাস আসে তাতে পানিও গরম করা যায় না ঠিকমতো।’
বাকলিয়া এলাকার খুরশিদা নামে এক গৃহিনী অভিযোগ করে বলেন, ‘শীত এলেই আমাদের এখানে গ্যাসের সমস্যা শুরু হয়। জানি না কখন এর সমাধান হবে।’
চকবাজারের মুদি দোকানদার আবু শাহমা বলেন, ‘সকালে গ্যাস চলে যায় সারাদিন কোনো খবর থাকে না। রাতে আসে খাওয়া দাওয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে। ঠিকমতো রান্না করা যাচ্ছে না বাসায়।’
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, ‘গ্যাসের সমস্যা নতুন কিছু নয়, এটা বহুদিনের। কিছু এলাকায় চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। আবার কিছু এলাকায় লাইনে সমস্যা থাকায় বেশি চাপে গ্যাস দেয়া যায় না। এছাড়া পেট্রোবাংলা থেকেও চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে না। এজন্যই একদিকে লাইনের সমস্যা আরেকদিকে সরবরাহ কম থাকায় সমস্যাটা বেশি হচ্ছে।’
অপরদিকে চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতেও গ্যাসের চাহিদা থাকলেও সেখানে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। তাই শিকলবাহা ২২৫/১৫০/৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ রয়েছে। এসব বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. শফিউল আজম খান পূর্বদেশকে বলেন, গ্যাসের কোথাও সমস্যা হলে আমরা আগাম নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধ করি। কিন্তু জরুরি কাজ আসলে আমরা গ্রাহকদের বলার সুযোগ পাই না। তাই না বলেই আমরা গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিই। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।