একসময় সরকার ছিল ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে। এখন দেশে রাজনৈতিক সরকার নেই। তবু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হতে পারছে না নিত্যপণ্যের বাজার। লাগামহীন দ্রব্যের দাম, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবল হতে দেশের মানুষ দীর্ঘদিন হতে মুক্তি চেয়ে পায়নি। যার কারণে সাধারণ মানুষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সাথে পরিবর্তনে ধারার সাথে যোগদান করেছিল। এসরকারের কাছে সাধারণ মানুষের দাবি, ‘দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। ভাঙতে হবে অবৈধ সিন্ডিকেট, শায়েস্তা করতে হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের। উৎপাদন খরচ, পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে কেজি প্রতি কত টাকা লাভ করতে পারবে তা নিশ্চিত করা গেলে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ব্যবসায়িরা কৃত্রিমভাবে পণ্যের দাম নিয়ে যে চালবাজি করছে তা দমন করা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। লাগামহীন দামে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরছে না কিছুতেই। পাল্লা দিয়ে দাম বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ডিম ও ব্রয়লার-সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে।
অন্যদিকে বিক্রেতাদের দাবি, গত দুই সপ্তাহে দাম বাড়েওনি আবার কমেওনি। আগের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বেড়েছে পাঙাসের দাম। সেই সঙ্গে অন্যান্য মাছের দামও বাড়তি। ক্রেতারা বলেন, গত দুই সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, যা এখন ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কোথাও-কোথাও দাম আরও ৫ টাকা বেশি। সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগির দাম বেড়ে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি মুরগি ৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে ডিমের দামও। বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম ডজন প্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে। এখন প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা কম আছে ফার্মের মুরগির সাদা ডিম। গতকাল বাজারে আসা ক্রেতারা বলছে গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি কিনেছি ১৭০ টাকায়। সেটা এখন ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ ঘুরতেই ১০ টাকা দাম বেড়ে গেল।
বিক্রেতারা আরও বলেন, কয়েকদিন আগেও ডিম প্রতি পিস ১৪ টাকা করে কিনেছি। সেটা আজকে ১৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। একই বাজারে মুরগির ব্যবসা করেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, আমরা তো ডিম-মুরগি উৎপাদন করি না। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়।
অন্যদিকে উচ্চমূল্যের দিক থেকে সেই আগের মতোই অবস্থায় গরু ও খাসির মাংস। বাজারে এখন গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায় আর খাসি ১ হাজার টাকায়। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ‘গরিবের মাছ’ হিসেবে খ্যাত পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়, যা সাধারণত ১৭০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া আজকের বাজারে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, যা সাধারণত ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যেই কিনতে পারা যায়। শুধু পাঙাস আর রুই মাছই নয়, দাম বেড়েছে তেলাপিয়া, পাবদা, চিংড়ি, ইলিশসহ প্রায় সব ধরনের মাছের।
গতকাল বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। চাষের কৈ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কার্প জাতীয় মাছ ৩৫০-৩৮০ টাকা, চাষের শিং ৪০০ টাকা, সাগরের পোয়া ৪০০-৬৫০ টাকা ও বাইলা মাছ বিক্রি হচ্ছিল ৬৫০-৭০০ টাকায়। এছাড়া পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় মাছ-মাংসের দাম তুলনামূলক বেশি চাওয়ায় বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে তর্কে জড়াচ্ছেন ক্রেতারা। সাধারণ মানুষ বলছে আমরা গরীব মানুষ, আমরা চাইলেই গরুর মাংস খেতে পারি না। মুরগির মাংসের দামটাও কিছুদিন ধরে বেশি। এ অবস্থায় মাছটাই ছিল আমাদের একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু এখন যে হারে দাম বাড়ছে, মাছ খাওয়াও বাদ দিয়ে শুধু ভর্তা-ভাতই খেতে হবে।
এদিকে সবজির বাজারে ১০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে শুধু চারটি সবজি। এগুলো হচ্ছে পেঁপে, পটল, ঢেঁড়স ও মুলা। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। এছাড়া পটল, ঢেঁড়স ও মুলার কেজি বাজারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এছাড়া বেশিরভাগ সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। এর মধ্যে আছে গোলবেগুন, বরবটি, করলা, ঝিঙা, চিচিঙা, ধুন্দুলের মতো সবজি। এসব সবজির দাম ১০০ টাকার নিচে নামছেই না। মোদ্দাকথা নিত্যপণ্যের বাজার সরকার ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেই। সর্বক্ষেত্রে ব্যবসায়িরাই ইচ্ছে মতো বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা কোন নীতি নৈতিকতার ধার ধারছে না। এদেশের ব্যবসায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। বাজার ব্যবস্থা দেশ ও জনগণের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে সরকার ও প্রশাসনকে।