দক্ষিণ চট্টগ্রামের ব্যাংকার পরিবারগুলোতে উৎকণ্ঠা

1

পটিয়া প্রতিনিধি

একের পর এক চাকরিচ্যুতির ঘটনায় পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে ব্যাংকার পরিবারগুলোতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে তিন দফায় প্রায় দেড়শ জনকে চাকরিচ্যুত করেছে তিনটি ব্যাংক। এর মধ্যে গত ৩১ অক্টোবর প্রায় ৫৮৯ জনকে চাকরিচ্যুত করে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এই কর্মকর্তাদের অধিকাংশের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। গত সোমবার ইউনিয়ন ব্যাংক ২৬৩ জনকে চাকরিচ্যুত করেছে। এছাড়া নিয়োগপত্র পেলেও ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকে যোগদান করতে পারেননি প্রায় ২৫০ জন কর্মকর্তা।
সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে আরো ১৮২ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এস আলম সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যাংকগুলোতেও চাকরিচ্যুতির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন থাকার বিষয়ে গুঞ্জন রয়েছে। সেই সাথে এস আলম সংশ্লিষ্ট ব্যাংগুলোতে আরো অনেককে নানাভাবে চাকরিচ্যুতির আশঙ্কা থাকায় পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় ১০ হাজার ব্যাংকার পরিবারে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চরম আকার ধারণ করেছে। পরিবারগুলো আর্থিক অনিশ্চয়তার দিন কাটাচ্ছে। অনেক পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ব্যাংকার। ফলে এসব পরিবার চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
চাকরি হারানো ব্যাংকারদের অভিযোগ, লক্ষ্য অর্জন না করার অজুহাতে কাউকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না মর্মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। তাতে আরও বলা হয়, সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা বা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না। কিন্তু বর্তমান সময়ে চাকরিচ্যুতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন আমলে নেয়া হচ্ছে না। তবে কোনো নির্দিষ্ট ব্যাচের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু বেছে বেছে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় ছাঁটাই-আতঙ্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন হওয়া ব্যাংকগুলোয় এই আতঙ্ক বেশি। ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রæপের নিয়ন্ত্রণে থাকার সময়ে নিয়োগ দেওয়া ব্যাংকগুলোতে চাকরিচ্যুতির ঘটনা সবচে বেশি। চাকরি হারানো ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রায় সকলের বাড়ি পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক, গেøাবাল ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকেও কর্মী ছাটাই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পটিয়ার ক্রীড়া সংগঠক বোরহান উদ্দিন জানান, চাকরিচ্যুতির ফলে পরিবারগুলোতে হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকের চাকরি হয়েছিল চাকরি পাওয়ার শেষ বয়সে। এখন চাকরিচ্যুতির ফলে তাদের নতুন করে চাকরিতে আবেদন করার সুযোগটুকুও হারিয়েছেন। কে ব্যাংক লুট করেছেন, তার দায় ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া চাকরিজীবীদের উপর কেন বর্তাবে? তারা তো দায়ী নয়। তারা যোগ্যতা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। চাকরিচ্যুতির কারণে অনেকের বিয়ে ভেঙে গেছে। অনেকে নতুন সংসার শুরু করে চাকরি হারিয়ে পড়েছেন বিপাকে। অনেক পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি চাকরি হারিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন।’