বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের মোকাবেলায় পৃথিবীজুড়েই অর্ধেকের বেশি মানুষ কোন না কোনোভাবে বিধি-নিষেধের বেড়াজালে বন্দী। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশও ১০ দিনের সাধারণ ছুটিতে আছে।
সবাইকে ঘরে অবস্থান করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ঘরের মধ্যে অবস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করছে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও।
এ অবস্থায় নগরজুড়ে সুনসান নীরবতা নেমে এসেছে। এমনকি সন্ধ্যা না হতেই পুরো নগর নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। চেনা শহর নিমেষেই অচেনা নগরে পরিণত হয়েছে।
করোনা প্রতিরোধে ভারতসহ বিশ্বের অন্য দেশ এখন লকডাউন। অনেক দেশে ঘোষণা করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। কোথাও চলছে কার্ফ্যু। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলা, মহল্লা থেকে শুরু করে বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। কিন্তু ১০ দিনের ছুটি শুরুর প্রথম দিন থেকেই যেন গোটা দেশ এমনিতেই লকডাউনে চলে গেছে।
সরকারের আহব্বানে মানুষ সাড়া দিয়ে ঘরে ফেরার ঘোষণাতেই যেন দেশজুড়ে লকডাউন চিত্র। সড়ক মহাসড়কও ফাঁকা।
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অন্য এক চট্টগ্রামের দেখা পাচ্ছেন চিরচেনা এ শহরের মানুষ। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে নৌ-রেল-সড়কসহ আকাশ পথের যোগাযোগ। বন্ধ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গণপরিবহন বলতে কিছুই নেই। প্রাইভেট গাড়িও চলাচল হচ্ছে একেবারে হাতে গোনা। বন্ধ মার্কেট, বিপণিবিতানসহ প্রায় সব রকমের দোকানপাট। তাই জনশূন্য হয়ে পড়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পথঘাট, অলি-গলি। সবখানেই যেন রাজ্যের নীরবতা নেমেছে।
হাতেগোনা কিছু রিক্শা দেখা গেছে ‘বিরাণভূমিতে’ পরিণত হওয়া এ শহরে। যাদের একান্ত প্রয়োজন তারাই শুধু রাস্তায় নেমেছেন।
তবে ওষুধের ফার্মেসি, কাঁচাবাজারসহ নিত্যপণ্যের কিছু দোকান খোলা থাকলেও সেখানেও আছে ক্রেতা সঙ্কট। নগরের সাথে বিচ্ছিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যন্ত। সব মিলিয়ে ভ‚তুরে নগরে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম।
এদিকে নগরজুড়ে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে। দুইজনকে একসাথে পথ চলতে দেখলেই তাদের বাসায় ফেরার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শও দিচ্ছেন। আবার প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়ার কারণে অনেককেই বাসায় ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে মোড়ে মোড়ে সচেতন করতে দেখা গেছে। তাছাড়া অপ্রয়োজনে কাউকে বাসা থেকে বের না হতে পাড়া মহল্লায় চলছে মাইকিং।
করোনার জীবাণু ধ্বংসে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে রাস্তায় রাস্তায় বিøচিং পাউডার মিশ্রিত পানি ছিটাতে দেখা গেছে। সিএমপির পক্ষ থেকেও রাস্তায় জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি ছেটানো হয়েছে।
অবরুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে নগরজুড়ে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। সবকিছু বন্ধ থাকলেও কিছু রিক্শাচালক, ভিক্ষুক ও খেটে খাওয়া মানুষকে রাস্তায় দেখা গেছে। রাস্তায় জনসমাগম না থাকায় তাদের আয়-রোজগারও নেই বললেই চলে।
আবার খাবার হোটেলগুলোও বন্ধ থাকায় যাদের বাসায় রান্না হয় না, তাদের পড়তে হচ্ছে বিপদে। অনেকের একবেলা খেয়ে না খেয়েই চলতে হচ্ছে। অবশ্য অলিগলিতে সীমিত আকারে কিছু দুএকটি খাবার হোটেল চালু রয়েছে। সাধারণ মানুষের এমন দুর্গতির মধ্যে এগিয়ে এসেছেন কিছু সমাজকর্মী। মানবিকগুণ সম্পন্ন এসব ব্যক্তিরা নিজ উদ্যোগে খেটে খাওয়া মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসছেন।
তবে অন্যান্য সময়ের সময়ের তুলনায় এখন তাদের কার্যক্রমেও রয়েছে ভিন্নতা। গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার সময় সিআরবির মোড়ে একটি মাইক্রোবাসে করে আসেন এক ব্যক্তি। মাইক্রো বাসের ভিতর থেকে কয়েকটি প্যাকেট বের করে অসহায় কয়েকজনের হাতে তুলে দেন। সাথে সাথেই তিনি চলে যান অন্যত্র।
একইভাবে বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন চৌধুরী অ্যানেল দুপুরে অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করেন।
প্যাকেট খাবারগুলো যেখানে অসহায় মানুষ দেখছেন সেখানে গাড়ি থামিয়ে হাতে তুলে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। শুধু তারাই নয়, নগরে এমন অনেক সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা এগিয়ে এসেছেন অসহায়দের পাশে।
সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে সন্ধ্যা নামতেই নগরজুড়ে গভীর রাতের নিস্তব্ধতা নেমে আসছে। নগরীর জিইসি মোড়, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নিউ মার্কেট, কাজীর দেউড়ি, আন্দরকিল্লা, লালখানবাজার, আগ্রাবাদ ইত্যাদি এলাকা ঘুরে দেখা যায় রাস্তাঘাটে সন্ধ্যার পর মানুষ ও গাড়ি নেই বললেই চলে। স্বাভাবিক সময়ে রাস্তায় মানুষ দেখা মিলতো। এমনকি ঈদের ছুটির সময়েও অল্প মানুষের দেখা মিললেও এখন একেবারেই নিস্তব্ধ নগরে পরিণত হয়েছে যানজটের এ শহর।