আনোয়ারা প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিকল্প সড়ক হিসেবে পরিচিত আনোয়ারা-বাঁশখালী সীমান্তের শঙ্খ নদীর উপর নির্মিত তৈলারদ্বীপ সেতুতে টোল আদায় বন্ধে গণশুনানির আয়োজন করেছে বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে এই গণ শুণানির আয়োজন করা হয়।
গতকাল রবিবার সকালে বাঁশখালী সীমান্তের টোল বক্সের সামনে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গণশুনানিতে আজীবন টোল আদায় বন্ধের জন্য শত শত চালক ও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ লিখিত বক্তব্য ও স্বাক্ষর দেন। এসব বক্তব্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে জানান দুই উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে দুই উপজেলার মাঝামাঝি শঙ্খ নদীর উপর তৈলারদ্বীপ সেতু নির্মাণের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। ২০০৫ সালের শেষের দিকে সেতুটি উদ্বোধন করা হলে ২০০৭ সাল থেকে টোল আদায় শুরু করা হয়। সেতুটি নির্মাণের পরে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের বিকল্প সড়ক হিসেবে গড়ে উঠে। এছাড়া আনোয়ারা উপজেলা হয়ে শহরে যাতায়াতের জন্য বাঁশখালী, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সহজ মাধ্যম এই সেতু। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার ছোট বড় গাড়ি চলাচল করে।
এদিকে কয়েক বছর পর রিকশা-মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন থেকে টোল আদায়ে অতিষ্ঠ হয়ে এ টোল বন্ধের জন্য দাবি তোলেন চালক ও স্থানীয়রা। ২০১৭ সালে তৈলারদ্বীপ সেতুর ইজারার জন্য পত্রিকায় দরপত্র আহবান করা হলে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা করেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। জনগণের পক্ষে দায়ের করা রিট মামলা পরিচালনা করেন সাবেক এটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ। বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং এটিএম সাইদুর রহমানের বেঞ্চ ২০১৭-১৮ সালের জন্য সেতুটির ইজারা প্রদান তথা টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ দেন।
তবে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের এক ডিও লেটারে পূণরায় টোল আদায়ের টেন্ডার প্রক্রিয়া চালু করা হয় বলে জানান উপস্থিত নেতৃবৃন্দ। এরপর টোল বন্ধের জন্য বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম করেন চালক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে আবারো আন্দোলনে নামেন তৈলারদ্বীপ সেতু দিয়ে যাতায়াত করা যানবাহনের চালক ও সচেতন মহল। আন্দোলনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর টোল আদায় বন্ধের জন্য লিখিত আবেদন করেন স্থানীয়রা। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে দুই উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) উপস্থিতিতে গণশুনানির আয়োজন করা হয়।
বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী বলেন, শঙ্খ নদীর ওপর বিভিন্ন এলাকায় আরও ৫টি সেতু থাকলেও শুধু তৈলারদ্বীপ সেতু থেকেই টোল আদায় করা হচ্ছে। যা বাঁশখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ। এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত শাহ আমানত সেতুর চেয়ে তৈলারদ্বীপ সেতু তুলনামূলক অনেক ছোট সেতু হলেও দ্বিগুণ টোল দিতে হয় এ সেতুতে। রাতে চলাচল করা দূরপাল্লার যানবাহন থেকে টোকেনবিহীন অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। এসবের কারণে অতিষ্ঠ ছিল মানুষ। এ টোল আদায় বন্ধের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
আনোয়ারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মোহাম্মদ হোসাইন জানান, তৈলারদ্বীপ সেতুতে টোল আদায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছে। এটি নিয়ে আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আমি ও বাঁশখালী উপজেলার এসিল্যান্ড গণশুনানির আয়োজন করি। গণশুনানি থেকে সাধারণ মানুষের মন্তব্য গ্রহণ করি। সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সঠিক বিশ্লেষণ করে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিব। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিব।