বিশ্বে প্রথমবারের মতো হীরা দিয়ে ব্যাটারি তৈরি করেছেন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা। তাদের দাবি, এমন এক যুগান্তকারী শক্তির উৎস এই ব্যাটারি, যা হাজার হাজার বছর ধরে ডিভাইসকে শক্তি দিতে সক্ষম।
বিদ্যুৎ তৈরির জন্য এ উদ্ভাবনী ব্যাটারিতে রেডিওকার্বন ডেটিংয়ে ব্যবহৃত কার্বনের আইসোটোপ ‘কার্বন-১৪’ ব্যবহার করেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টল’ ও যুক্তরাজ্যের পরমাণু শক্তি কর্তৃপক্ষ বা ইউকেএইএ-এর বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা। এর মধ্যে তেজস্ক্রিয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ব্যাটারির হীরার কাঠামোর ভেতরে বসানো হয়েছে কার্বন-১৪, যা এর তেজস্ক্রিয়া ক্ষয়ের মাধ্যমে শক্তি তৈরি করবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। খবর বিডিনিউজের।
বিভিন্ন সৌর প্যানেল আলোকে যেভাবে বিদ্যুতে রূপান্তর করে এই প্রক্রিয়াটি ঠিক তেমনই। এখানে শক্তি তৈরিতে কার্বন-১৪ থেকে দ্রুত চলমান ইলেকট্রন ব্যবহার করবে হীরার তৈরি এই নতুন ব্যাটারি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদী এক শক্তির উৎস এটি, যা ক্রমাগত অল্প পরিমাণে শক্তি উৎপাদন করে যাবে। যেখানে ব্যাটারি পরিবর্তন করা কঠিন বা অসম্ভব এমন সব পরিস্থিতিতে এসব ‘মাইক্রোপাওয়ার’ ধাঁচের ব্যাটারি হবে আদর্শ।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে, বিশেষ করে পেসমেকার, শ্রবণ সহায়ক ও চোখের ইমপ্লান্টের মতো ডিভাইসে ব্যবহার হতে পারে এসব ব্যাটারি। প্রচলিত ব্যাটারির বদলে হীরার তৈরি এসব ব্যাটারি রোগীদের আয়ু দীর্ঘায়িত করতে পারে। এসব ব্যাটারির ফলে মানুষের বারবার অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন কমে আসবে এবং রোগীরাও আরামবোধ করবেন।
মহাকাশ অনুসন্ধানের বেলাতেও সহায়ক হতে পারে এসব ব্যাটারি। কারণ, ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন ছাড়াই কয়েক দশক ধরে মহাকাশযান ও বিভিন্ন ট্র্যাকিং ডিভাইসকে শক্তি দেবে নতুন এই ব্যাটারি।
পৃথিবীতেও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে ব্যবহার করা যেতে পারে এসব ব্যাটারিকে। যেমন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান বা কোনো দূরবর্তী স্থান, যেখানে মানুষের প্রবেশাধিকার সীমিত রয়েছে এমন সব জায়গায়।
মেডিকেল ইমপ্লান্ট থেকে শুরু করে মহাকাশ ব্যবস্থা পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে শক্তি সরবরাহ করতে পারবে এসব ব্যাটারি, বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টল’-এর অধ্যাপক টম স্কট।
হীরার তৈরি ব্যাটারির এই দীর্ঘ আয়ুর চাবিকাঠি হচ্ছে কার্বন-১৪। কার্বনের এই তেজস্ক্রিয় পদার্থটির ‘হাফ লাইফ’ পাঁচ হাজার ৭শ বছর। পদার্থটিকে নিরাপদে ব্যাটারির হীরার স্তরের মধ্যে বসানো হয়েছে, যা ব্যাটারিকে করে তুলেছে টেকসই ও নিরাপদ।