এম এ হোসাইন
তৃণমূল পর্যায়ের পুনর্গঠনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। কেন্দ্র ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের কর্মসূচিকে সামনে রেখে নিচ থেকে উপরের দিকে দলকে ঢেলে সাজানোর কাজে হাত দিয়েছে সংগঠনটি। ইতোমধ্যে ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪২টিতে প্রতিনিধি সভা সম্পন্ন হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগ স্বীকার করা নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের নির্বাচন করে আহব্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। এরপর ওয়ার্ড, থানা ও মহানগর-সব পর্যায়ের নেতৃত্ব গঠিত হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে।
মহানগর বিএনপির আহব্বায়ক এরশাদ উল্লাহ বলেন, আমরা পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। কিন্তু সিনিয়র নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল মান্নান নোমান সাহেবের মৃত্যুতে কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়েছে। কারণ আমাদের পরিকল্পনা ছিল সিনিয়র দুই নেতার (নোমান-খসরু) সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া। এখন কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পেলেই আমরা আহব্বায়ক কমিটি ঘোষণা করব। এরপর নিচ থেকে উপরের দিকে (ওয়ার্ড থেকে মহানগর) সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিনিধি সভা এবং বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুগ্ম আহব্বায়কদের অধীনে কয়েকটি করে ওয়ার্ডের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছিল। পুরাতন ও ত্যাগী নেতাদের সঙ্গেও সমন্বয় করে সভা হয়েছে।
জানা গেছে, বিলুপ্ত ওয়ার্ড ও থানা কমিটি পুনর্গঠনের মাধ্যমে তৃণমূলকে সংগঠিত করতে দ্রুত ইউনিটগুলোতে আহব্বায়ক কমিটি গঠনের তৎপর রয়েছে নগর বিএনপি। সাংগঠনিক ওয়ার্ডসহ ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪১টিতে প্রতিনিধি সভা সম্পন্ন করা হয়েছে। এসব সভায় ৩১ দফা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওয়ার্ডে ৩১ সদস্য ও থানায় ৪১ সদস্যের আহŸায়ক কমিটি গঠন করে সেসব ইউনিটের কাউন্সিল আয়োজন করা হবে। ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকার দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতৃত্ব বাছাই করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ওয়ার্ড কমিটির ঘোষণা আসতে পারে। এরপর ইউনিটগুলো স্ব স্ব উদ্যোগে কাউন্সিলের আয়োজন করবে। এ উদ্যোগ সফল হলে দলীয় ভিত্তি হবে আরও শক্তিশালী।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) শওকত আজম খাজা বলেন, একটি ওয়ার্ড বাদে আমরা ৪১টি ওয়ার্ডে প্রতিনিধি সভা শেষ করেছি। প্রতিটি ইউনিটে ৩১ দফা নিয়ে সভা হয়েছে। বাদ পড়েছিল শুধু ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড। আগামী ১৫/২০ দিনের মধ্যে আমরা সেটিও সম্পন্ন করে ওয়ার্ডের আহব্বায়ক কমিটি দিয়ে দিব।
তিনি বলেন, ওয়ার্ডে ৩১ সদস্যের ও থানায় ৪১ সদস্যের আহব্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের মধ্য থেকেই যোগ্য নেতাদের নির্বাচন করা হবে। আহব্বায়ক কমিটিগুলো তাদের নিজ নিজ ইউনিটে কাউন্সিলের আয়োজন করবে। এভাবে নিচ থেকে উপরে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে মহানগর বিএনপিকে সুসংগঠিত করা হবে।
নগর বিএনপির একটি সূত্র জানায়, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিটি ওয়ার্ডে আহব্বায়ক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে কমিটি গঠনের সময় ওয়ার্ডের ত্যাগী, সাহসী ও পরীক্ষিত নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। এরপর সেই কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে। একই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে থানা ও মহানগর পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে।
এর আগে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মহানগরের ১৫টি থানা এবং ৪২টি ওয়ার্ডের পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তখন থেকেই দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় তৃণমূলকে সম্পৃক্ত করে দলের ভিত শক্ত করতে চায় নগর বিএনপি। অন্যদিকে বিভিন্ন পদে নেতৃত্ব প্রত্যাশী নেতারা এখন থেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। মাঠে সক্রিয় অনেক নেতাকর্মীও কমিটিতে জায়গা পাওয়ার আশা করছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি। পরবর্তীতে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। এরপর দুই দফা নগর বিএনপির আহব্বায়ক কমিটি পরিবর্তন হলেও থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বর্তমান এরশাদ উল্লাহ-নাজিমুর রহমানের নেতৃত্বাধীন নগর বিএনপির আহব্বায়ক কমিটি গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মহানগরের ১৫টি থানা এবং ৪২টি ওয়ার্ডের পুরনো কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল।