তুলির আঁচড়ে রঙিন হচ্ছে মাটির প্রতিমা

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

সনাতনী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে মন্দিরে মন্দিরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। খড়, বাঁশ, সুতা ও কাঁদামাটির মিশ্রনে প্রতিমার অবয়ব ফেরার পর শিল্পীর তুলির আঁচড়ে রঙে রঙিন হচ্ছে প্রতিমা। পড়ানো হচ্ছে অলংকারাদি। এখন নানা ডিজাইনের প্রতিমার রঙের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃতশিল্পীরা। থিমের আদলে মন্ডপ সাজানোর কাজও চলছে সমানতালে। দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে নগর গ্রামের হিন্দুদের পাড়া মহল্লায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
পঞ্জিকামতে, এবার দেবীর দোলায় আগমন ও ঘোটকে গমন করবেন দেবীদুর্গা। আগামী ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবীপক্ষ শুরু হবে। ৯ অক্টোবর ষষ্টীপূজার মধ্যদিয়ে দুর্গোৎসবের সূচনা হবে। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গাপূজা।
চট্টগ্রামের দেওয়ানজি পুকুর পাড়, রাজাপুর লাইন, এনায়েত বাজার, গোয়ালপাড়া, সদরঘাট, চকবাজারে বিভিন্ন প্রতিমালয়ে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়েছে। এছাড়াও প্রতিমা শিল্পীরা বাড়তি টাকায় গ্রামের পূজামন্ডপে গিয়ে প্রতিমা বানাচ্ছে। চট্টগ্রামে প্রায় ৭০জন শিল্পী প্রতিমা তৈরি করছে বলে জানা যায়।
সদরঘাটের কয়েকটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমালয়ে কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা। মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা রাঙানোর কাজ। সারি সারি করে রাখা প্রতিমায় জোরসে রঙের কাজ চলছে। প্রতিমালয় গুলোতে দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। প্রতিটি প্রতিমায় রঙের কাজে সময় দিচ্ছে ৪-৫জন শিল্পী। কেউ অসুর, কেউ মহিষ আবার কেউ দুর্গাদেবীর খুটিনাটি রঙের কাজ পরখ করছেন। নগর ছাড়াও এবার গ্রামাঞ্চলে শিল্পীরা প্রতিমালয় বানিয়েছে।
প্রতিমা শিল্পীরা বলেন, দুর্গাপূজার জন্য একটা পুরো সেট প্রতিমা বানাতে পাঁচ থেকে ছয় শিল্পীর অন্তত ১৫ দিন সময় লাগে। প্রতিসেট প্রতিমা তৈরিতে ৪০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত মজুরি মিলে। তবে প্রতিমা তৈরির খরচ এবং নানা উপাদানের সংকট বেড়েছে। যা বাড়তি টাকায় কিনে প্রতিমা বানাতে হয়।
বাঁশখালীতে প্রতিমালয় স্থাপন করা গোকূল পাল বলেন, ‘এবার আমি বাঁশখালী, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ায় ২২টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। কয়েকটি প্রতিমায় রঙের কাজ চলছে। পূজার দুইদিন আগেই সবগুলো প্রতিমা ডেলিভারি শেষ হবে।’
সদরঘাটের প্রতিমাশিল্পী তপন পাল বলেন, ‘এ বছর বাঁশখালী, আনোয়ারা ও শহর মিলিয়ে ১৫টি অর্ডার পেয়েছি। পূজা কমে যাওয়ায় অর্ডার কমেছে। প্রতিটি কারখানাতেই একই অবস্থা। অনেক সমস্যা নিয়েই টিকে আছি। কাজের পরিধি অনুযায়ী মজুরি মিলে না। তবুও পৈত্রিক পেশা হিসেবে আগলে রেখেছি।’
পূজার আয়োজকরা বলছেন, চট্টগ্রামে একসময় আচার্য্য ব্রাহ্মনরা প্রতিমা তৈরির কাজ করতো। কালের বিবর্তনে তাদের অনেকেই এখন প্রতিমা তৈরি পেশা ছেড়েছে। প্রতিমা তৈরির চট্টগ্রামের বাজার এখন পুরোপুরি ফরিদপুর, মাদারিপুর অঞ্চলের পাল গোষ্ঠির নিয়ন্ত্রনে।
এদিকে প্রতিমালয় ছাড়াও বিভিন্ন মন্ডপে প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি সাজসজ্জায় চলছে বিশেষ প্রস্তুতি। বাঁশ, সামিয়ানা টাঙানো পূজামন্ডপে নানা থিমের সন্নিবেশ ঘটানো হচ্ছে। এবার চট্টগ্রামে দুই হাজার ৪৫৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তন্মধ্যে মহানগরে ২৯৩টি ও জেলার ১৫ উপজেলায় ২ হাজার ১৬৫টি মন্ডপে পূজার আয়োজন চলছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুর্গাপূজার প্রস্তুতিসভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, উৎসবমুখর, অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পূজা সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে যেখানে মন্ডপ তৈরি হবে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে পূজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ নিয়োজিত থাকবে।