পূর্বদেশ ডেস্ক
তিস্তা নদীকে বাঁচাতে প্রয়োজনে জাতিসংঘসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণের কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ যদি তিস্তার ন্যায্য হিস্যা দিতে দেরি করে তাহলে নদী পাড়ের মানুষ ও কৃষিকে বাঁচাতে আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে সব পথ বেছে নিতে হবে। প্রয়োজনে জাতিসংঘসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে নদীপাড়ে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির শেষ দিন গতকাল মঙ্গলবার বিকালে লালমনিরহাট সদরে তিস্তা সেতু এলাকায় সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
এর আগে সকাল ১০টায় ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের’ ব্যানারে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা সেতু থেকে রংপুরের কাউনিয়া অভিমুখে পদযাত্রা শুরু হয়। পরে কাউনিয়া থেকে পদযাত্রাটি আবার তিস্তা সেতুতে গিয়ে শেষ হয়। বিকালে সমাপনী জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
তিস্তার পানি বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্য উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, “আজকে সারা পৃথিবীর মানুষ দেখছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ তিস্তার ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত। উত্তরাঞ্চলের মানুষ ভারতকে জানিয়ে দিতে চায়, অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্য। অথচ আমরা দেখছি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যে পানি বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্য আজ সেই পানির জন্য উত্তরাঞ্চলের মানুষকে আন্দোলন করতে হচ্ছে। ভারত ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে অপ্রতিবেশী সুলভ আচরণ করেই চলছে।
১৯৯২ সালের ব্রাদার কনভেনশন ও ১৯৯৭ সালের পানি প্রবাহ কনভেনশনে স্বাক্ষর করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন বিএনপির শীর্ষ এই নেতা।
৫০ বছরেও বাংলাদেশের মানুষ ফারাক্কার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, তিস্তা বাংলাদেশের জন্য আরেকটা অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ জন্য প্রতিবেশী দেশ নদীর উজানে গজাল ডোবায় বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখছে। এ কারণে বন্যা-খরায় উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তিস্তার বুকে আজ ধু-ধু বালুচর। ভারতের কারণেই উত্তরাঞ্চলের মানুষের আজ এই দুর্দশা।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তারেক রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পলাতক একজন স্বৈরাচার বলেছিল, ‘আমরা যা ভারতকে দিয়েছি তা তারা সারাজীবন মনে রাখবে।’ কিন্তু ভারত পলাতক স্বৈরাচারকে আশ্রয় ছাড়া আর কিছুই দেয়নি।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে স্বৈরাচারী কায়দায় সম্পূর্ণ অকার্যকর করে রেখেছিল। ফারাক্কা সমস্যার সমাধান হয়নি। এখন পর্যন্ত জনগণের প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তিও হয় নাই। অথচ সব রীতিনীতি ভঙ্গ করে হাসিনা ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছিল।
ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে স্বৈরাচার হাসিনা ‘সেবাদাসী’ হিসেবে পরিণত হয়েছিল। বর্তমান বিবেচনায় ভারতের সঙ্গে সব চুক্তি পুনঃবিবেচনা কিংবা পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার।
তিনি বলেন, একটি দেশের সঙ্গে আরেক দেশের সম্পর্ক হওয়া উচিত পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। সে কারণে সম্পর্ক রক্ষার জন্য প্রথম স্বার্থ হবে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা। এ কারণে বিএনপির স্লোগান সবার আগে বাংলাদেশ।
এ কারণে বাংলাদেশের মানুষ কাঁটাতারের বেড়ায় আর ফেলানীর লাশ ঝুলন্ত দেখতে চায় না। সীমান্তে নিরীহ মানুষের রক্তাক্ত মৃতদেহ আর বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায় না।