তিন দফা দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে পদযাত্রা করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীরা কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন। পুলিশের বাধায় একদফা ছত্রভঙ্গ হওয়ার কিছু সময় পর আবার তারা সেখানে জড়ো হয়েছেন। রোদ-বৃষ্টি তোয়াক্কা না করে রাতেও আন্দোলনে অনড় রয়েছেন তারা। সড়কে অবস্থান নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ করছেন।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস না আসা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে তাদের সঙ্গে শিক্ষকরাও রয়েছেন।
গতকাল বুধবার রাত ৮টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা কাকরাইল মসজিদ মোড় ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। খবর বিডিনিউজ’র
তিন দফা দাবি নিয়ে এদিন দুপুরে ক্যাম্পাস থেকে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও দপ্তর যমুনা অভিমুখে ‘লং মার্চ’ শুরু করে। বিক্ষোভ মিছিলটি শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, তাঁতি বাজার, বংশাল মোড় হয়ে গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের সামনে এলে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই ব্যারিকেড ভেঙে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে এলে আবারও পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। সেখানেও তাদের ঠেকাতে পারেনি পুলিশ। এরপর একে একে সচিবালয়, শিক্ষা ভবন, হাই কোর্ট, মৎস্য ভবনের মোড়ের বাধা উপেক্ষা করে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসেন তারা।
মিছিলটি প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে এলে সেখানে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পুলিশের হামলায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহতের খবর পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে আহত অন্তত পঁচিশজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এসময় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে কাকরাইল মসজিদে আশ্রয় নেন। এর কিছু সময় পর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি শেষে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুনরায় যমুনা অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করে।
তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ‘ভুজুংভাজুং বুঝি না, লংমার্চ টু যমুনা’, ‘রক্ত লাগলে রক্ত দে, তবু আমাদের আবাসন দে, জ্বালো রে জ্বালো আগুন জ্বালো‘, ’আর নয় হেলাফেলা, এবার হবে আসল খেলা’, ‘বৈষম্যের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘জবিয়ান আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘শিক্ষকদের অপমান, সইবে না রে জবিয়ান’, ‘আমার ভাই আহত কেন ইন্টেরিম জবাব দে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
বিকাল ৪টায় ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসসের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষক-কর্মকর্তারা। এসময় তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রমনা জোনের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এসময় ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের নেতৃত্বে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমিন, প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজ্জামুল হক ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিনসহ প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাতে যান।
এদিকে যমুনাতে যাওয়ার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাদা দলের নেতা অধ্যাপক মো. মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগ ওঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। এর প্রতিবাদে আবারও বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোশাররফ বলেন, “এভাবে তো আমাদের অপমান করতে পারে না। আমরা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তারা দুপুর থেকে আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ করে যাচ্ছে।”
তিনি হামলা ও অসদাচরণ করা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ ছাড়াও শিক্ষকদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে পুনরায় যান। রাত ৮টা পর্যন্ত তারা সেখানেই আছেন।