নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আপনাদের মনে আছে, লাখ লাখ মানুষের চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে, লাখ লাখ মানুষ প্রত্যেকটি আমাদের বিভাগীয় শহরে সবকিছু উপেক্ষা করে জীবনের বিনিময়ে তারা সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ঢাকাতে গুলি করে বিএনপির সমাবেশ পন্ড করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার সেই আশা তারেক রহমানের নেতৃত্বের গুণের কারণে সফল হয়নি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে সমস্ত দেশ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে শেষ ধাক্কা যখন দিয়েছে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। সেই পটভূমি সৃষ্টি না হতো, সেই অবস্থা সৃষ্টি না হতো তাহলে শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর সুযোগ ছিল না। এখন অনেক গল্প শুনছি, শেখ হাসিনার পতনের গল্পের শেষ নেই। প্রত্যেকদিন নতুন নতুন গল্প শুনছি। ওরা নাকি এটা করেছে, সেটা করেছে। ১৫ বছর যখন আমরা রাস্তায় আন্দোলন করেছি, জীবন দিয়েছি, গুম-হত্যার শিকার হয়েছি, জেলে গিয়েছি বারবার, তখন তো তোমাদের এসব গল্প দেখিনি। তোমাদের ছিল কেউ, আমাদের সঙ্গে তো তখন কেউ আসেনি।’
তিনি গতকাল শনিবার বিকালে নগরীর কাজীর দেউরী আলমাস সিনেমা মোড়ে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত র্যালিপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার সহযোগিতায়, সক্রিয় অংশগ্রহণে বাংলাদেশের মানুষ জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন। বাংলাদেশে এক নতুন ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে ৭ নভেম্বর। শেখ মুজিবুর রহমান, বাকশাল, আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তির স্বাদ পেয়েছে। শহীদ জিয়াকে মুক্ত করার মাধ্যমে এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছিল। সেই বাংলাদেশ হলো বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাংলাদেশ, স্বাধীনতার বাংলাদেশ, আইনের শাসনের বাংলাদেশ, জীবনের নিরাপত্তার বাংলাদেশ, স্বাধীন-সার্বভৌম মাথা উঁচু করার বাংলাদেশ। সেই ধারা অব্যাহত রেখে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচারের বিরুদ্ধ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে স্বৈরাচারদের পতন ঘটিয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচারদের বিদায় করে আবারো শুধু বহুদলীয় গণতন্ত্র নয়, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছে। আবারো বাংলাদেশে মুক্তবাজার উন্মুক্ত হয়ে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে ফেলেছিল। যেই অর্থনীতির ভিত্তি জিয়াউর রহমান সৃষ্টি করেছিলেন, সেই অর্থনীতির ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।’
আমীর খসরু বলেন, ‘১/১১ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ যখন কিছু লোকের মাধ্যমে মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে আবারো একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে, বিএনপিকে সেদিন তারা পরাজিত করেছিল। পরবর্তীতে ওই স্বৈরাচারকে আবারো ক্ষমতায় বসিয়েছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দিয়ে, বিএনপির সাত লাখের অধিক নেতাকর্মীর বিরদ্ধে মামলা দিয়ে নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন, গুম, হত্যা, জেলহত্যা, পুলিশের হেফাজতে হত্যা, এর মাধ্যমে সেদিন বাংলাদেশে আবারো একটি নিরাপত্তাহীন জনগণের জন্য পরাধীন জাতি সৃষ্টি করেছিল। সেখানে আবারো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রখে দাঁড়িয়েছিল। রখে দাঁড়ানোর কারণে তাকে জেলে যেতে হয়েছে, জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে, চিকিৎসা না দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। এরপরের আন্দোলন এবার তারেক রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল সমস্ত দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। ছাত্র জনতা, সর্বস্তরের মানুষকে তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আমরা শেখ হাসিনাকে মোটামুটি পরাস্ত করতে পেরেছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘যেই আন্দোলনকে নিজেদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে, চাকরি হারাতে হয়েছে, ব্যবসা হারাতে হয়েছে, পঙ্গু হতে হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে। তোমরা কয়জন? সব হিসাব করলে কিন্তু অসুবিধা আছে! আমরা কিন্তু হিসাব করতে চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছিলাম, সবাই মিলে শেখ হাসিনাকে বিদায় করে দিতে। দেশ একটা গণতন্ত্রের অবস্থা ফিরিয়ে আনুক। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশবাসী তাদের ভোটে যাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, সংসদে যাবে, সরকারে যাবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। জবাবদিহিতাহীন কোনো সরকার বাংলাদেশের কল্যাণ করতে পারবে না।’
আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘দেশে এখন আবার আরেক বয়ান। এই বয়ানের অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে তা এ বয়ানের মধ্যে নেই। বাংলাদেশের জনগণ কবে ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করবে সেই বয়ান নেই। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হবে সেই বয়ান নেই। বয়ান হচ্ছে, সংস্কারের বয়ান। আরে সংস্কার কি বিএনপির আগে আপনারা দিয়েছেন। ৬ বছর আগে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন। কারণ, আমরা জনগণের কথা বুঝেছি বলে আমরা দিয়েছি। এক বছর আগে তারেক রহমানের নেতৃত্ব আমরা সবাই একটি নতুন সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। ওই সংস্কারে সবকিছু আছে। কিছু বাকি নেই। আপনারা যা বলেছেন, তাও আছে, তার বাইরে আছে। সংস্কারে আপনাদের চেয়ে আরো বেশি আছে।’
তিনি বলেন, ‘যে কয়েকটি সংস্কার, জাতীয় ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে হবে সেগুলো সহসাত করে ফেলুন। এরপর নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান। এবং যে সংস্কারে ঐক্যমত হবে না সেটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিবে আগামী দিনে। নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ হবে তারা সিদ্ধান্ত নিবে, সরকার সিদ্ধান্ত নিবে। এর বাইরে অনির্বাচিত কারো কোনো অধিকার নেই। জাতীয় ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু হবে সহসা সমাধান করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহব্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও উত্তর জেলা বিএনপির আহব্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক ফজু, প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর, কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল আলম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহব্বায়ক এম এ হালিম প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে এক বিশাল বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়ে নগরীর কাজির দেউড়ি মোড়, নুর আহমেদ সড়ক, এনায়েত বাজার মোড়, জুবলি রোড, তিনপুলের মাথা, আমতলা মোড় হয়ে নিউমার্কেটে স্বাধীনতা চত্বরে এসে মহানগর বিএনপির আহব্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।