নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এএমএম বাহাউদ্দীন বলেছেন, তারেক রহমানই আগামী দিনের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ইসলামের সপক্ষে সুস্পষ্ট এবং বলিষ্ঠ অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে আমার দীর্ঘদিনের অত্যন্ত সুসম্পর্ক। বিএনপির সঙ্গে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ভিন্নমত থাকতে পারে, তবে তারেক রহমান দেশের নেতৃত্ব দানের যোগ্যতায় এবং ইসলামের সপক্ষে ইতোমধ্যে দীর্ঘসময় নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে যারা থাকবেন আগামীতে (নির্বাচন) সম্মিলিতভাবে তাদের পক্ষে কাজ করতে হবে।
তিনি গতকাল রবিবার নগরীর ষোলশহরস্থ এলজিইডি অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তার আগে তিনি নবনির্বাচিত নেতাদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি বলেন, আগামী দিনে দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে, এখন তার ভিত্তি রচনা হবে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের লক্ষ্য হলো ইসলামি সমাজ গড়া। সেই সমাজ গড়ার দায়িত্ব শিক্ষকদের পালন করতে হবে। এ মুহূর্তে দেশের সব চেয়ে বড় সঙ্কট সামাজিক সঙ্কট। ঘুষ, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা বেড়েই চলেছে। জেন-জিরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সমাজকে সঠিক পথে আনা যাচ্ছে না। প্রফেসর ইউনূসের মতো ব্যক্তিও এটা মোকাবেলা করতে পারছেন না। এটি তার ইচ্ছাকৃত নয়, তিনি যাদের সাথে সম্পর্ক করেছেন তাদের কারণেই এমনটা হচ্ছে।
এই সঙ্কট মোকাবেলায় মাদ্রাসার শিক্ষক ও আলেমদের ভূমিকা রাখার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রফেসর ইউনূসকে সমর্থন দিয়েছিলাম। তিনি রাজনীতি এবং অর্থনীতি দুটোতেই ফেল করেছেন।
তিনি বলেন, আগামী দিনে যারা ক্ষমতায় আসবেন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। নৈতিক সমাজ গঠন করতে হলে আলেম-ওলামাদের সহযোগিতা লাগবে। তারাই সমাজ পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছেন। ক্যাডার দিয়ে সমাজ পরিবর্তন করা যাবে না, ক্ষমতায়ও যাওয়া যাবে না। আমরা নৈতিক সমাজ চাই, নৈতিকতা ছাড়া অর্থ অর্জন করে তা ধরে রাখা যাবে না। আমরা সোমালিয়া, নাইজেরিয়া হতে চাই না। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির নামে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন, মাজারে ভাঙচুর বহির্বিশে^ ভুলবার্তা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আলেমরা যাতে খুব সম্মানিত জায়গায় থাকতে পারে সেজন্য বিএনপির নেতৃত্বের সাথে কথা হচ্ছে। বিভ্রান্ত আকিদা আগামী দিনে যাতে ফ্রন্টলাইনে আসতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তারেক রহমান বলেছেন শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করবেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াবেন। এটা যাতে তাদের নির্বাচনী ম্যানুফ্যাস্টো থাকে সেই প্রচেষ্টা থাকবে। মাদ্রাসা শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার সিলেবাস পরিবর্তন নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল নানা চক্রান্ত করছে। সিলেবাসে হাত দিলে সেই হাত থাকবে না। ৬০ লাখ শিক্ষকের ভাগ্য জামায়াতের হাতে থাকতে পারবে না। এটা সরকারের হাতে থাকতে হবে। সংখ্যা দিয়ে কিছু হয় না, আলেমদের একটা বিশাল শক্তি চট্টগ্রামে। সবাইকে ইসলামের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
মাদ্রাসার শিক্ষকরা শুধুমাত্র অর্থের জন্য চাকরি করেন না উল্লেখ করে এএমএম বাহাউদ্দীন বলেন, তারা সমাজ গঠনে নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ তৈরি করার কাজ করছেন, যারা সমাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আগামী দিনেও সমাজের নেতৃত্ব আলেম-ওলামাদের কাছেই থাকবে। রাজনৈতিক তথ্য উপাত্ত এটাই বলছে আগামী দিনে তারেক রহমানই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তার নেতৃত্বে সমস্ত সেক্টর এক জায়গায় আসতে হবে। সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আর তখনই নৈতিক সমাজ গড়ে উঠবে।
অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব আল্লামা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে রাখতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কাজ করে যাচ্ছে। রাস্তায় নামা ছাড়াই আমরা শিক্ষকদের সব অধিকার আদায় করছি। আগামী দিনে মাদরাসা শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিও ইনশাআল্লাহ আদায় হবে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ আল্লামা আবদুল আলিম রিজভীর সভাপতিত্বে অভিষেক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক অধ্যক্ষ ছৈয়দ মাওলানা আবু ছালেহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ মুফতি মুহাম্মদ এজহারুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মোবাশশিরুল হক নঈমী, যুগ্ম মহাসচিব নোমান আহমেদ। বক্তব্য রাখেন মাওলানা ছালেহ আহমদ আনছারী, প্রিন্সিপাল মোখতার আহমদ, ছৈয়দ মুহাম্মদ আলা উদ্দীন আল কাদেরী।
উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ আল্লামা আবদুল খালেক শওকী, অধ্যক্ষ আল্লামা একরামুল হক, অধ্যক্ষ ছৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন, অধ্যক্ষ আল্লামা মহিউদ্দিন হাশেমী, অধ্যক্ষ আমির আহমদ আনোয়ারী, অধ্যক্ষ ত্বোয়াহা মোহাম্মদ মোদ্দাচ্ছির, অধ্যক্ষ রিদুয়ানুল হক হক্কানি, অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, অধ্যাপক ছৈয়দ হাফেজ আহমদ, অধ্যক্ষ জানে আলম নিজামী প্রমুখ।
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার শিক্ষার্থী আবু বকর মোহাম্মদ রেজার কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন, মহাসচিব শাব্বীর আহমদ মোমতাজীসহ অতিথিদের ফুলের তোড়া ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অভিষেক শেষে দেশ জাতির কল্যাণ ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হয়।











