তারুণ্য উৎসব : আগামীর বাংলাদেশ

1

ডক্টর মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন

‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’-প্রতিপাদ্যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শুরু হয়েছে তারুণ্যের উৎসব। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে তারুণ্যের উৎসবের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচি চলবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত। তারুণ্যের উৎসব ২০২৫-এর লক্ষ্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, পারস্পরিক সহযোগিতার মানসিকতা গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশের বৈচিত্র্য ও সংস্কৃতির সৌন্দর্যকে উদযাপন করা।
তারুণ্য অর্থ হচ্ছে বাধা না মানা। তীব্র স্রোতে উজান সাতারে পাড়ি দেয়া-ই তরুণদের কর্ম। তারুণ্য একটি অদম্য শক্তি। এটি অপ্রতিরোধ্য ঝড়। একটি দৃপ্ত শপত। একটি অপারেজয় দুর্জেয় ঘাঁটি। তারুণ্য এক অসাধ্য সাধনের কারিগর। অফুরন্ত প্রাণ শক্তি আর সৃষ্টির উন্মাদনা-ই তারুণের গৌরব। বদ্ধ কুঠিরের দুয়ার চুর্ণ করে চাওয়াটা অর্জন করা-ই তার ধর্ম। চেতনাদৃপ্ত তরুণরা যখন জেগে ওঠে তখন সকল প্রতিবন্ধকতার সকল চড়াই-উৎরাই মাড়িয়ে তাঁরা বিজয় ছিনয়ে আনে। বিজয়ের পুষ্পমালা তাঁদের পদচুম্বন করে। ইতিবাচক অর্জনসহ সকল সেক্টরে-ই রয়েছে তরুণদের অবদান।
কাজী নজরুলর মতো বলতে হয়, “শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির।”
এটা সর্বজন বিধিত যে, কেবল তরুণরাই পারবে জাতিকে একটি শান্তির সমাজ উপহার দিতে। যে সমাজে থাকবেনা কোন ধরনের অন্যায়-অবিচার, শোষন, জুলুম, গুম, খুন, দুর্নীতি, ইভটিজিং, চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি পাপচার। কোন তরুণরা? যারা স্বপ্নবাজ। যারা মনে করেন দেশটাকে সাজাতে হবে, নিজের কারণে। উদ্যোক্তা থেকে উদ্যম, সাহস থেকে সংগ্রাম, উল্লাস থেকে উদ্ভব, রাজপথ থেকে রাজনীতি, উচ্চারণ থেকে উত্তোলন সবকিছুতে এখন তারুণ্যই মুখ্য। শুধু মুখ্য নয় নেতৃত্ব এখন তরুণদের হাতে। এই হাত দেশের জন্য তৈরি করুন।
চারদিকে যখন তারুণ্যের এত উৎসব তখন আমাদের তরুণরা কী করছে। গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার বিষয় এখন তরুণদের বিপথে যাওয়া, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া। এই আলোচনা একদিনে তৈরি হয়নি বা ঘুম থেকে উঠেই কেউ দেখিনি যে, তরুণরা বিপথে যাচ্ছে তাদের নেয়া হচ্ছে এমন পথে। তাদের বিপথে যাওয়ার জন্য আমাদের সমাজ, পরিবেশ, শিক্ষা, প্রশাসন, রাজনীতি, সংস্কৃতি অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। দ্বিমত করবেন? সেই সুযোগও নেই। যুক্তি এবং বাস্তবতা আপনাকে মানতেই হবে।
ভারত বিজয়ী সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসেম যখন ভারতে ইসলাম প্রচার করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। কুতাইবা বিন মুসলিম যিনি এশিয়ার মধ্যে ইসলামের বিস্তার ঘটান তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। ১৯২৯ সালে যখন ভারতের কুখ্যাত কাফির ‘রাজপাল’ ‘রঙ্গিলা রাসুল’ নামে একটি বই প্রকাশ করে এবং এ বইটিতে মহানবী সা এর চরিত্র হনন এবং রাসুল সা সম্পর্কে কটূক্তি করে তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আলিম উদ্দিন একজন শহিদ হন তখন তিনি ও ছিলেন তরুন। আমাদের বাংলার ইতিহাসে যে ক’টি সংগ্রাম হয়েছে, যেমন- ১৯৫২ সালের মাতৃভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার সংগ্রাম, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯২ এর বাবরী মসজিদ রক্ষার আন্দোলন, ২০২৪ সালে একটি ব্যতিক্রম আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে-ই তরুণরাই বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে।
উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে সমস্যা এবং সংকট ভুরি ভুরি। কিন্তু সেই সংকট বা সমস্যা নিরসনে রাষ্ট্রের ভূমিকা বা রাষ্ট্রের আগ্রহ কতখানি সেই প্রশ্ন বারবার আসে। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ মানেই কিন্তু সুখের স্বর্গ নয়। নিজ দেশ মানেই কিন্তু ঘৃণা বা হতাশার কেন্দ্রবিন্দু নয়। পরিবেশ এবং সমাজ ধাপে ধাপে সেই সংকট বা সমস্যাকে বড় করে তোলে।
ইসলামে তারুণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তারুণ্য মানব জীবনের অমূল্য এক সম্পদ। এটা জীবন মহীরুহের বিকশিত চারাগাছ। তারুণ্য তথা যৌবনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ইহকালে কল্যাণ ও পরকালীন জীবনে মুক্তির বিশাল বাগিচায় উপনীত হবে। মানব জীবন মানুষের মহামূল্যবান এক সম্পদ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে তারুণ্য তথা যৌবন। এ কারণে হাদিসের মধ্যে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে ঐসমস্ত তরুণদেরকে বসার সুযোগ দিবেন যারা তরুণ বয়সের সময়কে আল্লাহর রাহে ব্যয় করে কাটিয়েছে’।
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) বিশ্বমানবতার কল্যাণে তরুণদের নিয়েই ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্ব প্রথম সংগঠন ‘হিলফুল ফুযুল যুব সংঘ’ গঠন করেছিলেন। হযরত আবু বকর (রা.), হযরত উমর (রা.) তরুণ বয়সে ইসলাম কবুল করেন। আসহাবে কাহাফে যারা ছিলেন তাঁরা ও ছিলেণ তরুণ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘হে নবী! আপনার কাছে আমি তাদের (আসহাফে কাহাফ) এর ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করেছি, তাঁরা ছিল কয়েকজন তরুণ। তাঁরা তাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আনয়ণ করেছিল এবং আমি তাদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছি’। (সূরা কাহাফ- ১৩ )
ইসলামের প্রথম মুয়াজিন বেলাল (রা). ছিলেন তরুণ। হযরত ইব্রাহিম (আ.) যখন মূতি পূজার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পাষন্ড নমরুদের তৈরীকৃত আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়ে শাহাদত বরণ করেন তখন তিনি ছিলেন তরুণ। হযরত ইউসুফ (আ:) যখন কারাগারে ছিলেন তখন তিনি তরুণ ছিলেন। হযরত ইউনুস (আ:) যখন সমুদ্রের মাছ গিলে ফেলে তখন তিনি ছিলেন তরুণ। হযরত দাউদ (আ:) যখন জালিম শাসক জালুত কে হত্য করেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ।
আমি সেইসব তরুণদের কথা ভাবি যাদের মুখের কথা দিয়ে, ধর্মের ভয় দেখিয়ে, প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে বিপথে নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। তাদের যদি সাংস্কৃতিক চর্চা বা সাংস্কৃতিক আবহে রাখা যেত তারা কি বিপথে যেত? তাদের যদি শিশুকাল থেকেই খেলাধুলা, বইপাঠ বা সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে তোলা যেত তবে কি তারা বিপথে যেত? যেত না। বিপথে যাওয়া তরুণদের সুপথে আনার পথ বা প্রক্রিয়া আমরা জানি কিন্তু কেন জানি আমাদের বা সরকারের বা রাষ্ট্রের সেদিকে মনোযোগ কম। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই শিল্প, তরুণ, শিক্ষা, সংস্কৃতি বাদ দিয়ে। প্রাকৃতিক সম্পদ বাদ দিয়েও বিল্ডিং বানানোতে মনোযোগ বেশি।
সাড়ে চার কোটি তরুণের দেশ বাংলাদেশ। এই সাড়ে ৪ কোটি তরুণকে আমরা চাইলেই শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারি। কেন আমরা সেদিকে মনযোগী না? কেন তাদের সংকটকে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি না তা আমাকে বারবার ভাবায়।
আমরা জেনেছি শমরিতা পাল ঐশীর কথা। যে ঐশীকে এখনো বাবা-মা দেখে রাখে। সেই ঐশী ১৮টা বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে দিয়েছে একক প্রচেষ্টায়। আমরা জেনেছি নুসরাত সাবরিন চৌধুরীর কথা। যে নুসরাত আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষকে বাঁচিয়েছে। জেনেছি প্রদীপ্ত সাক্ষর জয়ের কথা। যে কি না চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়ার পাশাপাশি টেন মিনিট স্কুলে পড়াচ্ছে। তরুণদের উৎসাহিত করছে। জেনেছি চন্দন কুমার পালের কথা। যে চন্দন লক্ষ বেতনের চাকরি ফেলে শুধু তরুণদের উজ্জীবিত করার জন্য মহান আদর্শের শিক্ষকতা বেছে নিয়েছে। জেনেছি নাহিদা খান সুর্মির কথা। বাচ্চা একটা মেয়ে অথচ কী দারুণ দায়বোধসম্পন্ন। এই বয়সে সে বিশেষ শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। এই বোধ বা তাড়নার কথা তাকে কেউ বলে দেয়নি। নিজ থেকেই করেছে। এমন বহু উদাহরণ রয়েছে যারা নিজেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বিলীন করে যাচ্ছে।
আমরা জেনেছি মুস্তাফিজের কথা। যে অসম্ভব মেধাবী একজন তরুণ। নিজের পেশার পাশাপাশি পিআইবিতে ফ্যাক্ট চেকের উপর কারিকুলাম তৈরি করে সাংবাদিকদের সচেতন করছে। পেয়েছি শারমিন সুপ্তাকে। জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটার। দেশ নিয়ে তার বোধ, চিন্তা আমাদের মুগ্ধ করেছে। জেনেছি উত্তম কাব্য, ডা. অর্থি মÐল, আনন্দ কুটুম, প্রকৌশলী নয়ন, সিনথি, ডা. প্রান্তি, ফারিয়া, শিউলি মÐল, রাকা, সুমাইয়া ঝরা, ডা. শুভ্রদেব হালদার, বিপ্লব, ডা. সৈকত, রাজীব, অমিতসহ অসংখ্য তরুণদের কথা। যাদের দেখে আমরা পথ চলতে শিখি।
২০২৪ আন্দোলনের সেইসব তরুণদের কথাও বলতে পারি। প্রতিদিন নতুন নতুন নামে আন্দোলন। আবুসাঈদ, মুগ্ধ যাঁদের বুক পেতে দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা নতুন পথ খুঁজে পাই। তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে একটি নতুন দেশের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যায় তরুণরা। দেশের এই দুঃসময়ে এগিয়ে আসা আমার প্রিয় তরুণদের প্রতি সন্মান।
আমাদের তরুণদের ইতিহাস সমৃদ্ধ। তারা ভাষা আন্দোলন করেছে, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে হাজির হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য লড়েছে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বুক পেতে দিয়েছে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে রাজপথে নেমেছে, করোনার সময় কারো কথা না শুনে মানুষ বাঁচানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে, ২০২৪ এর আন্েেদালনের কথা বার বার আসে এই পর্যায়ে।
সংকটে তরুণেরা ঝাঁপিয়ে পড়বে এইটাই সবার কাম্য। দেশের জন্য যুদ্ধ করতে বাড়ি ছাড়বে এইটাই আশা। আমরা একজন তরুণকেও বিপথে যেতে দিতে রাজি না। তাই সাংস্কৃতিক আন্দোলন জরুরি। শহর থেকে জেলা সব জায়গায় সাংস্কৃতিক চর্চা জরুরি। নাট্যচর্চা জরুরি। পথনাটক আন্দোলন জরুরি। পাঠাগার আন্দোলন জরুরি। সবচেয়ে বেশি জরুরি শিক্ষাব্যবস্থায় সাংস্কৃতিক চর্চা বাধ্যতামূলক করা। তাতে শিশুমনে দেশপ্রেম জেগে উঠবে। জাগবে দেশের প্রতি মমত্ববোধ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো আমিও বলতে চাই
“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,
ভয় নাই, ওরে ভয় নাই।
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই, তা’র ক্ষয় নাই।”
নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’- যুগে যুগে জগতে গীত হয়েছে তরুণ ও তারুণ্যের জয়গান। প্রবীণের প্রজ্ঞা ও পরামর্শ, নবীনের বল-বীর্য, সাহস ও উদ্দীপনায় পৃথিবীতে আসে পরিবর্তন। অসম্ভবকে সম্ভব করতে ঝুঁকি নিতে পারে শুধু তারুণ্য। একুশ শতকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে তারুণ্যের সেই দীপ্তি খুঁজে পাই না। এখানে যে বয়সে ছাত্রসংগঠনের কমিটিগুলোতে ঢোকার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়, তার চেয়ে কম বয়সী অনেক বড় বড় রাষ্ট্রনায়ককে আমরা দেখেছি বিশ শতকে। লিড ট্রটস্কি ১৯১৭ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে সফল অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাত্র ৩৮ বছর বয়সে। মিসরে গামাল আবদেল নাসের একই বয়সে রাষ্ট্রের হাল ধরেছিলেন। কিউবায় যখন বিপব সংগঠিত হয়, তখন এর নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর বয়স ছিল ৩২। তাঁর অন্যতম সহযোগী চে’ গুয়েভারার মাত্র ৩০ চলছে তখন। এ সবই ঘটেছে ১৯৫৯ সালের জানুয়ারিতে। একই বছর লিবিয়ায় রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে আদিম যাযাবর সমাজের পালাবদল ঘটিয়েছিলেন মুয়াম্মার গাদ্দাফি মাত্র ২৩ বছর বয়সে। এ রকম উদাহরণ আরও অনেক দেওয়া যায়।
আমাদের দেশে তরুণসমাজ কোনো অবিমিশ্র ও অবিভাজ্য সামাজিক শক্তি নয়। একাত্তরে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনে তরুণসমাজের একটি অংশ সক্রিয় হয়েছিল। আমরা অনেক সময় গর্ব করে বলে থাকি, এ দেশের ছাত্রসমাজ জাতীয় রাজনীতিতে অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিল একটা সময় পর্যন্ত। উদাহরণ হিসেবে ভাষা আন্দোলন, আইয়ুবের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন এবং উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের কথা আমরা অহংকারের সঙ্গে উচ্চারণ করি। এখন ২০২৪ এর জুলাই আন্দোলনকেও যুক্ত করতে পারব। এটি গর্বের। এই গর্বকে ছড়িয়ে দিতে আরো সচেতন হতে হবে।
মোটা দাগে বলতে পারি তোমরা-
ক. আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হও
খ. গবেষণায় মন দাও-
গ. জাতিসংঘের ৬টি ভাষার মধ্যে যেকোন একটি শিখ-
ঘ. দেশপ্রেমে নিজেকে তৈরি কর-
ঙ.সরকারের প্রতিষ্ঠানসমূহ যাতে নাগরিকদের কোন অধিকার ক্ষুন্ন করতে না পারে সেদিকে মন দাও।
সরকারকে বলি একটি মাসব্যাপি অনুষ্ঠান দিয়ে এই তরুণদের ঐক্যবদ্ধ করা যাবে না। ২০২৪ এর আন্দোলনে অপরিসীম ভূমিকার জন্য তরুণদের প্রতি আমাদের দায় বেড়ে গেছে। তাদের নিয়ে ভাবনার দিকটা আরো গভীরে যেতে হবে। বহু গভীরে। তাদের অভিভাবক দরকার। জেলা ভিত্তিক তাদের ঐক্যবদ্ধকরে দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তারুণ্য শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে পরিণত করে তাদের দেশপ্রেম ও উন্নতবোধ তৈরিতে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তাদের কাজে লাগাতে হবে। এমন সব পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যাতে তরুণরা হতাশ না হন, কারণ তারাই আগামী দিনের বাংলাদেশ। আসুন সময়ের সাথে কর্মসূচি গ্রহণ করি, তারুণ্য শক্তিকে আমাদের দেশের জন্য প্রস্তুত করি। আর এই কাজটি করতে পারবে সরকারের সুন্দর পরিকল্পনাও দৃষ্টির মধ্য দিয়ে। আশাকরি বর্তমান সরকার তথা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার তা করবেই।

লেখক : শিক্ষাবিদ-নজরুল গবেষক