এম এ হোসাইন
তারুণ্যনির্ভর সমাবেশ সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর চট্টগ্রামে নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তা ও মনোবলহীনতা ছিল, সে শূন্যতা অনেকটাই পূরণ হয়েছে। সমাবেশে নেতারা তারুণ্যের শক্তিকে রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সমাবেশ শেষে চট্টগ্রামজুড়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন জাগরণ দেখা যাচ্ছে।
গত শনিবার যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ আয়োজনে নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপি মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা তারুণ্যের শক্তিকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে আনার তাগিদ দেন এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক লড়াইয়ে যুবসমাজকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান। এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার দেখা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী বলেন, চট্টগ্রামে তারুণ্যের সমাবেশের প্রভাব শুধু এই শহরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এটির প্রভাব সারা দেশে পড়েছে। সারা দেশে তরুণদের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ তৈরি হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি বেশি। আমাদের ডিমান্ড ছিল অধিকারের প্রশ্নে তরুণদের সচেতন করা। আমরা আমাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা দেখাতে পেরেছি। যদিও দীর্ঘ সাত মাস ধরে মহানগর যুবদলের কমিটি নেই, তারপরও আমাদের উপস্থিতি ও সফলতা প্রমাণ করে আমরা ঐক্যবদ্ধ।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল তরুণদের সম্পৃক্ত করা এবং তা আমরা সফলভাবে করতে পেরেছি। তরুণরা এখন বিএনপির চিন্তা-চেতনা, রাজনৈতিক দর্শন ও গণতন্ত্রের পক্ষে নিজেদের দৃঢ়ভাবে দাঁড় করিয়েছে। সমাবেশের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো তরুণ সমাজের মাঝে কতটা প্রভাবশালী। তিনি আরো বলেন, তরুণদের নিয়ে যে কনসেপ্ট সেটাতে তরুণরা সমর্থন দিয়েছে, আস্থা রেখেছে। আমরা তরুণদের মাধ্যমে মেধাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়তে চাই। তারুণ্যের সমাবেশের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক হবে। তারুণ্যের সমাবেশ চট্টগ্রামে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যে সাংগঠনিক ভিত্তি কতটা মজবুত সেটা ফুটে উঠেছে। সমাজের প্রত্যেক স্তরে যে আমাদের বিচরণ সেটা এই সমাবেশ প্রমাণ করে।
সমাবেশ শেষে নগরীর বিভিন্ন থানায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা মিছিল ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক কর্মকান্ডকে আরও জোরদার করছেন। বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতারা জানিয়েছেন, তারুণ্যের এই ঢেউকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আরও রাজনৈতিক সক্রিয়তা বাড়বে তরুণদের মধ্যে।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহব্বায়ক সাইফুল আলম বলেন, তরুণদের মাঝে যে বিস্ফোরণ আমরা দেখেছি, তা আমাদের ভবিষ্যৎ আন্দোলনের রসদ। হাসিনার পতনের পর নতুন বাংলাদেশ গঠনে ছাত্রদল নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে ছিলাম, আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। এসএসসি পরীক্ষার সময় হলগুলোর সামনেও আমরা সহায়ক ভ‚মিকা পালন করেছি, যাতে প্রমাণ হয়, ছাত্রদল শুধু রাজপথের আন্দোলন নয়, বরং সমাজ গঠনের অংশীদারও। এসব কারণে তরুণরা কাধে কাধ মিলিয়ে ছাত্রদল করতে চাচ্ছে। তারুণ্যের সমাবেশে সেটার প্রমাণ মিলেছে।
তারুণ্যের সমাবেশে ব্যাপক উপস্থিতি বিএনপিকে উজ্জীবিত করেছে। তারুণ্যের এই ঢেউকে কাজে লাগিয়ে আগামীতে যুবসমাজকে নেতৃত্বের জায়গায় আনতে নতুন করে পরিকল্পন করছে দলটি। নেতারা এটাও মনে করেন, তারুণ্যের এই সমাবেশে শৃঙ্খলা, ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা এবং সুশৃঙ্খল সংগঠনের চিত্র ফুটে উঠেছে, যা বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। তারুণ্যনির্ভর রাজনীতির পথে হাঁটতেই বিএনপি ভবিষ্যৎ আন্দোলন ও নির্বাচনী পরিকল্পনা সাজাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ কেবল একটি রাজনৈতিক শোডাউন নয়, বরং এটি বিএনপির সাংগঠনিক গতিশীলতা ও রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের বড় ইঙ্গিত। দীর্ঘদিন পর এমন বড় ও সফল আয়োজন নতুন প্রজন্মকে রাজনীতির মুলধারায় আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বিএনপির এই সমাবেশ এখন শুধু একটি স্মৃতি নয়, বরং দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশক হয়ে উঠেছে।