তাপদাহ উপেক্ষা করে ‘তারুণ্যের জোয়ার’

2

এম এ হোসাইন

পলোগ্রাউন্ড মাঠে তারুণ্যের জোয়ার দেখিয়েছে বিএনপি। গতকাল শনিবার বিকালে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের মহাসমাবেশে উপছেপড়া ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। বিএনপির ৩ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে আয়োজিত ‘তারুণ্যের মহাসমাবেশে’বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় অংশ নেন লাখো নেতাকর্মী। ভ্যাপসা গরম আর প্রচন্ড তাপদাহকে উপেক্ষা করে দুপুর থেকেই বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। বিকেল ৩টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয় বিকেল ৪টায়। এর আগ পর্যন্ত সমগ্র পলোগ্রাউন্ড উদ্দীপনামূলক গান, স্লোগান ও ঢোল-বাদ্যের আওয়াজে মুখর হয়ে ওঠে।
মহাসমাবেশে অংশ নিতে চট্টগ্রাম মহানগরী ও বিভাগের ৯৯টি উপজেলা ছাড়াও কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, ফেনী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা দলে দলে মিছিল নিয়ে আসেন। অনেকে হেঁটে, কেউবা ট্রাকে, কেউ আবার মোটরসাইকেল বহর নিয়ে আসেন সমাবেশস্থলে। লাখ লাখ লোকের ভিড় ঠেলে সামনে দিকে এগুতে থাকেন তরুণরা। সেখানে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে, দলীয় পতাকা উড়িয়ে সৃষ্টি হয় এক অনন্য রাজনৈতিক পরিবেশের।
পলোগ্রাউন্ড মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের টাইগার পাস, ডিটি রোড, দেওয়ানহাট ও কাজির দেউড়ি এলাকাজুড়ে নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মিছিলগুলো পলোগ্রাউন্ডের চারপাশে জড়ো হয়ে বড় আকারে মিশে যায়। এতে নগরের যানবাহন চলাচলে সাময়িক বিঘœ ঘটে। টাইগার পাস মোড়ে বহু নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে মিছিলের সারিবদ্ধতা তৈরি করে। সমাবেশস্থলে পৌঁছাতে অনেকেই সিআরবি হয়ে আসেন। নগরের কেন্দ্রস্থলে সৃষ্টি হয় এক বিশাল জনসমুদ্রের।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আর লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তরুণদের উদ্দেশে তাদের বক্তব্যে ছিলো আশাবাদ, পরিবর্তনের আহবান ও বর্তমান সরকারবিরোধী রাজনৈতিক বার্তা।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ বলেন, এই গরমের মধ্যেও লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। তরুণদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করা এবং আগামীর রাষ্ট্র নির্মাণে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই আমাদের এই আয়োজন। শুধু ভোট নয়, রাজনীতি, অর্থনীতি ও শিল্পায়নেও তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল। আমাদের ডাকে তরুণরা সাড়া দিয়ে সমাবেশ সফল করেছে।
সিআরবিসহ নগরের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল, ফেস্টুন ও ব্যানারে শোভিত নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নজর কাড়ে। দলীয় পতাকা ও ব্যাজ ধারণ করে উজ্জীবিত তরুণদের মুখে ছিলো ভবিষ্যতের প্রত্যাশা। থানা, ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদেরও দেখা গিয়েছে। সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতালের সামনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি নিজেও অবস্থান নেন এবং নেতাকর্মীদের উদ্দীপনায় উদ্বুদ্ধ করেন।
নোয়াখালী জেলা যুবদল নেতা মো. ইব্রাহিম বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা বাস্তবায়নের দিক নির্দেশনা দিবেন। আমরা নোয়াখালী জেলা যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা আমাদের নয়নমনি, পথপ্রদর্শক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারুণ্যের সমাবেশকে প্রাণবন্ত করতে চট্টগ্রাম এসেছি।
এদিকে সমাবেশ শুরুর আগেই নগরের বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। বহদ্দারহাট হয়ে মুরাদপুর থেকে টাইগারপাস, চৌমুহনী থেকে দেওয়ানহাট হয়ে টাইগারপাস মোড় দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয় সমাবেশে আসা ও বিভিন্ন কাজে বের হওয়া যাত্রীদের। এছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন সড়ক-উপসড়কেও যানজট দেখা গেছে। যানজট থেকে বাদ পড়েনি ফ্লাইওভারগুলোও।
নেতাকর্মীরা জানান, এমন তীব্র গরমের মধ্যেও সমাবেশে অংশ নিয়েছে কয়েক লাখ নেতাকর্মী। একদিকে গরম, অন্যদিকে মানুষের ঠাসাঠাসি; ফলে শঙ্কা রয়েছে হিট স্ট্রোকের। ঝুঁকি এড়াতে নেতাকর্মীদের জন্য প্রায় ৭২ হাজার লিটার পানির ব্যবস্থা করেছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। এ ছাড়া করা হয়েছে শরবতের ব্যবস্থাও।
বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় সমাবেশ সফল করতে দীর্ঘদিন ধরে মাঠপর্যায়ে প্রস্তুতি নিয়েছে। থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে একাধিক সভা, মিছিল ও প্রচারণা কর্মসূচি পালন করেছে তারা। তরুণদের নিয়ে এই রাজনৈতিক আন্দোলনে এবার চট্টগ্রামে দেখা গেল ভিন্ন মাত্রার উচ্ছ্বাস ও অংশগ্রহণ।