তদারকি জোরদার করতে হবে

2

এবারের রমজানে নিত্যপণ্যের দাম শুরুতে বাড়তি থাকলেও সরকারের গভীর নজরদারিতে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। বিশেষ করে শাক-সবজি, ডিম ও মাংসের বাজার ছিল নিয়ন্ত্রণে। যদিও আমদানিকৃত পণ্যের বাজার, সোয়াবিন তেল ও চালের দাম বাড়তি ছিল। এ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়া সরগরম থাকলেও সাধারণ মানুষ সবজি, ডিম ও মাংসের বাজার স্থির থাকায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ছিল। আশা করা হয়েছিল, ঈদের পরও বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন রকম। রমজানের পর দুই সপ্তাহ না যেতেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে- ঈদের পর চাল, তেলসহ গ্রোসারি সামগ্রি, শাক-সবজি, মাছ-মাংসের বাজারে আবারও উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও খুচরা বাজারে আলু ও মসুর ডালের দাম কেজি প্রতি ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সোয়াবিন তেল লিটার প্রতি বেড়েছে ১২ টাকা। চালের দাম বস্তা প্রতি বেড়েছে ৪শ টাকা থেকে ৬শ টাকা। ফার্মের ডিমের দাম বেড়েছে ডজন প্রতি ৬-৮ টাকা। এছাড়া ঈদের পর একরকম নীরবে পেঁয়াজের দামও বাড়ানো হয়েছে। চড়ামূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে আদা ও রসুন। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে সবজির দামও বাড়তির খাতায় নাম লিখিয়েছে। ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকার নিচে কোন সবজি এখন বাজাওে পাওয়া যাবে না। মুরগির দাম কয়েকদিন কিছুটা কমলেও এখন আবারও কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। সমুদ্রের কোন মাছ ৬শ টাকার নিচে নেই। বাঙালির প্রধান উৎসব পহেলা বৈশাখ চলে গেল। খুব কম মানুষের পাতে উঠেছে ইলিশ। ইলিশ আর পান্তা ভাতের সংস্কৃতিতে এখন লুই-কাতলা স্থান করে নিয়েছে। ইলিশের বাজার কেজি প্রতি ১হাজার থেকে ১৮শ টাকার নিচে নেই। গত কয়েকদিন বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। বাজারের এ উত্তাপের পেছনে বাজিার সিন্ডিকেটকে দায়ি করছে ভোক্তা সাধারণ। চাল, তেল, সবজি ও মাছ-মাংসের সিন্ডিকেট ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মূলত এ চক্রের কারসাজিতেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। বস্তুত রোজায় পণ্যের দাম কম থাকায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি মিললেও ঈদের পর একে একে সব ধরনের পণ্যের দামই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে উচ্চশ্রেণির মানুষের ভোগান্তি না হলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট বাড়ে। সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি, বরং রাজনৈতিক পাটপরিবর্তনের পর অর্থনীতিতে বৈরী প্রভাব পড়ছে। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বেকারত্ব। এ অবস্থা বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম থামানো না গেলে বাজার অনিবার্যভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যাবে। এটি সত্য যে, পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় তা দিয়ে মধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষের চাহিদা মেটাতে কষ্ট হয়। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে, বাজার তদারকি জোরদার করে অসাধুদের আইনের আওতায় আনা।
সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্নআয়ের মানুষ যে কষ্টে আছেন, তা বলাই বাহুল্য। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে যে হারে দাম বাড়ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা দেখছি, ঠুনকো অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিচ্ছে। খুচরা বাজারে ক্রেতারা সেসব পণ্য অস্বাভাবিক দাম দিয়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আমরা মনে করি, বাজারে সঠিক তদারকির অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিচ্ছে। এ কারণে বাজারে সার্বক্ষণিক নজরদারি প্রয়োজন। সিন্ডিকেট ভাঙতে নিতে হবে শক্ত পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকারের মতো দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। রাঘববোয়ালরা তো বটেই, বাজার অস্থিরতায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধ লোকদেখানো নামমাত্র জরিমানা ধার্য নয়, কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, প্রয়োজনে বিধান পরিবর্তন করে হলেও। ডিজিটাল এই যুগে কৃষকদের কথা চিন্তা করে মাঠপর্যায় থেকে সবজিসহ নিত্যপণ্য কীভাবে সরাসরি খোলাবাজারে সরবরাহ করা যায়, সে পথও খুঁজে বের করতে হবে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এমনটিই প্রত্যাশা।