নিজস্ব প্রতিবেদক
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ‘না’ ভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তনের দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। পাশাপাশি জাতীয় সংসদকে দেশ ও জাতির কল্যাণে আকাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কাছে জনগণের আকাক্সক্ষাভিত্তিক সুপারিশমালা তুলে ধরতে গতকাল শনিবার নগরীর টিআইসি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের সাতটি বিভাগে সংগঠনটি সংবাদ সম্মেলন করছে।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজন’র বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী। এ সময় কমিটির আহব্বায়ক অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান ও কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক দিলীপ সরকার উপস্থিত ছিলেন।
সংবিধান সংস্কার কমিশনকে যেসব সুপারিশ অগ্রাধিকার হিসেবে নেওয়ার জন্য সুজনের পক্ষ থেকে আহŸান জানানো হয়েছে, তার মধ্যে আছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাসহ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন, উচ্চকক্ষের জন্য নির্বাচন পদ্ধতি নির্ধারণসহ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা ও উচ্চকক্ষকে পেশাভিত্তিক পার্লামেন্টের রূপ দেওয়া, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না- এমন বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করা এবং সংবিধানকে প্রকৃত অর্থেই অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যের সংবিধানে পরিণত করা।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন ও নারীর জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসনসহ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছেও দাবি রেখেছে সুজন।
তাদের বলা হয়েছে, তারা যেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে এ আহবান রাখে। এছাড়া বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন বাতিল করে নতুন করে আইন প্রণয়ন, সার্চ কমিটিতে সরকারি ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, জনবল নিয়োগের ক্ষমতা কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা, না-ভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনসহ আরও বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের কাছে সুজন’র আরও উল্লেখযোগ্য সুপারিশের মধ্যে আছে, পুলিশ ও জনপ্রশাসনকে সম্পূর্ণ দলীয়করণমুক্ত করে রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ করা, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে সরকারি কর্মসূচিতে পরিণত না করা, দলীয় কর্মসূচিতে পুলিশ ও জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা, বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়ন, বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বলয় থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনকে মুক্ত করা।
এছাড়া গণমাধ্যমের ওয়াচ ডগের ভ‚মিকা পালনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিপন্থী সকল নিবর্তনমূলক আইন বাতিলেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কাছে সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালু, স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির অবসান ঘটানো এবং শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কাছে শ্রমিকের সংজ্ঞায় কৃষি শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা, শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুসহ আরও কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
সংগঠনের বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির আহব্বায়ক অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধান সংশোধনের সুযোগ না থাকলে সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এমনভাবে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে, যাতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক তারা সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং অন্যান্য দল তাতে সমর্থন দেবে।