পূর্বদেশ ডেস্ক
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে না ফিরে আলাদা প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো ঠিক করার পরই অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজে নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সভা শেষে গতকাল সোমবার বিকালে ঢাকা কলেজে ব্রিফ্রিংয়ে এ কথা বলেন কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস।
বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বের হয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন করছেন রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ আলাদা প্রতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা তৈরির জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি করে। খবর বিডিনিউজের।
সাত কলেজের একটি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস বিফ্রিংয়ে বলেন, কলেজগুলোর জন্য আলাদা নতুন যে কাঠামোর কথা সরকার চিন্তা করছে সেখানে ভর্তির বিষয়টি নির্ধারিত হবে। তাদের যদি কোনো সহায়তা লাগে সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিতে সম্মতি দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রোববার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও মারামারির পর গতকাল ডাকা জরুরি বৈঠকে সাত কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত থাকবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। অধ্যাপক ইলিয়াস সেই সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না। নতুন ওই কাঠামো সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে কাজ শুরু করবে। তবে সাত কলেজে চলমান পরীক্ষাগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালানোর কথা বলেছেন কলেজগুলোর অধ্যক্ষরা।
আমাদের কয়েকটা পরীক্ষা চলমান। আমরা সাত কলেজের পরীক্ষাগুলো শেষ করতে চাই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ও সম্মত।
চলমান পরীক্ষাগুলো আমরা চালাতে চাই, তাতে যদি শিক্ষার্থীরা সম্মত থাকে। দু-একটি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে, অবস্থা দেখে ওই তারিখগুলো নতুন করে দেওয়ার কথা আমরা বলেছি।
উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বিফ্রিংয়ে তিনি বলেন, সভায় শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত কী নেবে, সেটা দেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই, এটা উনারা নেবেন।
আলাদা কাঠামোর বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, যেহেতু সরকার একটা উচ্চপর্যায়ের কমিটি করেছেন, সেখানে আমরা সাত কলেজের প্রিন্সিপাল ও বিভাগীয় প্রধানরা আমন্ত্রিত হয়ে তাদেরকে অবস্থাটা ব্যাখ্যা করেছি। ছাত্রদের চাওয়াটার সঙ্গে এটা কতটা সঙ্গতিপূর্ণ সেটা আমরা তুলে ধরেছি।
কমিটি বলেছে, তারা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার পর বরেণ্য শিক্ষাবিদদের সঙ্গেও কথা বলবেন। তারপর তারা একাটি সিদ্ধান্ত দেবেন, যেটা হল এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আরেকটা কাঠামো দাঁড় করাবেন। সেটার কী রূপরেখা হবে, কী কাঠামো হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়নি।
এর আগে দুপুরে উপাচার্যের কার্যালয়ের সভাকক্ষে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের জরুরি বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজকে আলাদা করার সিদ্ধান্তসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক বছর এগিয়ে এনে এ বছর থেকেই অর্থাৎ ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আসন সংখ্যা ও ভর্তি ফি নির্ধারণসহ যাবতীয় বিষয়ে মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল থাকবে, যাতে তাদের শিক্ষাজীবন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।