ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন কবে?

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডাবল লাইনে রূপান্তর হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। যে কারণে এই রুটে কমে এসেছে যাত্রা সময়। আগে যেখানে এই রুট পাড়ি দিতে ছয় ঘণ্টা সময় লাগতো, এখন সেখানে লাগছে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। এক ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হওয়ায় ট্রেনযাত্রায় মানুষের আগ্রহ আরও বেড়েছে। এই রুটে চলাচলকারী প্রত্যেক ট্রেনে প্রতিদিনই যাত্রীর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রেন যাত্রীরা টিকিট সংকটে বাধ্য হয়েই বিকল্প উপায়ে বিমান কিংবা বাসে যাতায়াত করছে। দেশের বিভিন্ন রুটে নতুন ট্রেন চালু হলেও দীর্ঘ ৮ বছরেও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন চালু না হওয়ায় চট্টগ্রামবাসীর আক্ষেপ আছে।সর্বশেষ ২০১৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটটিকে একপ্রকার অবহেলায় রেখে ঢাকা-কক্সবাজার রুটকে ঘিরেই বেশি আগ্রহ রেলওয়ের।
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেল রুট। এই রুটে প্রতিদিনই হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। অনেক যাত্রী টিকিট না পেয়ে ফেরত যায়। এই রুটে নতুন ট্রেন চালুর প্রয়োজনীয়তা থাকলেও ইঞ্জিন ও কোচ সংকটের কারণে চাইলেও নতুন ট্রেন চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি এখন চলমান ট্রেনগুলো চালু রাখতে যে পরিমান ইঞ্জিনের চাহিদা রয়েছে, সে পরিমান ইঞ্জিন মিলছে না। পূর্বাঞ্চলে দৈনিক ১০৪টি ইঞ্জিনের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত ইঞ্জিন ৯০-৯৫টি পাওয়া যায়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরাও চাই নতুন ট্রেন চালু হোক, ট্রেনের রুট বর্ধিত হোক। ইতোমধ্যে কয়েকটি ট্রেনের রুট বর্ধিত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন ট্রেন চালু কিংবা রুট বর্ধিত করতে বড় বাধা ইঞ্জিন সংকট।’
জানা যায়, চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে ২০১৬ সালের ২৫ জুন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হয়। দীর্ঘ আট বছরেও এই রুটে নতুন ট্রেন চালু হয়নি। তবে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও গত বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যটক এক্সপ্রেস নামে দুটি নতুন ট্রেন চালু হয়েছে। সময়সূচির কারণে চট্টগ্রামের যাত্রীরা এই দুটি ট্রেনে কম যাত্রা করে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে প্রবাল ও সৈকত এক্সপ্রেস নামে দুটি নতুন ট্রেন চালু হয়েছে।
পাহাড়তলী ডিজেল ওয়ার্কশপের কর্মব্যবস্থাপক এতেশাম মো. শফিক পূর্বদেশকে বলেন, ‘নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা ইঞ্জিন সংকট সমাধানের চেষ্টা করছি। নিয়মানুযায়ী চাহিদার ২০ শতাংশ ইঞ্জিন রেডি রাখতে হয়। কিন্তু নানা কারনে সেটি করা যাচ্ছে না। আমরা আপাতত রেল সেবা চালু রাখতে যতটুকু প্রয়োজন তাই করছি। নতুন রুটে ট্রেন চালু করার কারণে ইঞ্জিনের চাহিদা বেড়েছে।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি মাসে আসন্ন টাইম টেবিল-৫৪তে বেশ কিছু নতুন ট্রেন চালুর প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ রুট হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে কোন নতুন ট্রেন প্রস্তাব করা হয়নি। এই টাইম টেবিল আগামী মাসে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল হতে রেল ভবনে পাঠানো প্রস্তাবনায় বিদ্যমান ট্রেন চলাচলের সময় পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা-নরসিংদী রুটে এক জোড়া, ঢাকা-ভৈরববাজার পর্যন্ত দুই জোড়া ও লাকসাম নোয়াখালী রুটে নতুন এক জোড়া ট্রেন পরিচালনা করতে চায় রেল। পর্যায়ক্রমে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-চাঁদপুরগামী চারটি ট্রেনের রুট কক্সবাজার স্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী তুর্ণা এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, মহানগর গোধূলী এবং চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে চলাচলকারী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটির রুট কক্সবাজার পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। এই ট্রেনগুলোর রুট বর্ধিত করা হলে ট্রেনে যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আরও কমপক্ষে দুই জোড়া নতুন ট্রেন চালুর প্রয়োজনীয়তা বাড়বে। বর্তমানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অধীনে ২৭ জোড়া আন্তঃনগর, ২৬ জোড়া কমিউটার, আট জোড়া মেইল, ১৬ জোড়া লোকাল ও চার জোড়া পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করে।
যাত্রীরা জানান, বর্তমানে অন্তবর্তীকালীন সরকারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা আছেন চট্টগ্রামের সন্তান মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি চাইলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। ট্রেন যাত্রায় যে হারে মানুষের চাপ বেড়েছে সে হিসেবে নতুন ট্রেন চাওয়াটা চট্টগ্রামবাসীর ন্যায্য অধিকার। ইঞ্জিন সংকটের কারনে নতুন ট্রেন চালুতে যে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে তা নিরসনেও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
চট্টগ্রামের যাত্রী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বাসে যানজটের ভয়, বিমানে ভাড়া বেশি হওয়ায় ট্রেনের প্রতি মানুষের আগ্রহটা বেশি থাকে। এছাড়াও ট্রেন যাত্রা নিরাপদ ও সময় কম লাগার কারণে ট্রেন যাত্রায় মানুষের আস্থা আছে। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নিয়মিত টিকিট পাওয়া যায় না। ট্রেনের তুলনায় যাত্রীর চাপ অনেক বেশি। এই রুটে আরো কয়েকটি নতুন ট্রেন চালু করা প্রয়োজন।’