ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ আজ

1

হাটহাজারী প্রতিনিধি

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন বিরোধী প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিলের দাবিতে আজ ৩ মে মহাসমাবেশে যোগ দিতে দেশবাসীকে আহবান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচীব আল্লামা সাজেদুর রহমান।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে সংগঠনটির যুগ্মমহাসচীব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী কর্তৃক গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এই আহবান জানান।
বিবৃতিতে তারা আলেম-ওলামার পরামর্শসহ ধর্মপ্রাণ বৃহত্তর নারীসমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুনভাবে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহবান জানান।
তারা আরও বলেন, জুলাইর গণঅভ্যুত্থানে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে আমাদের অনেক মা-বোন তাদের সন্তান ও ভাইদের সাথে রাজপথে নেমে এসেছিলেন। রাষ্ট্র সংস্কারে তাদেরও হক রয়েছে। কিন্তু ঔপনিবেশিক মানসিকতা ও পশ্চিমা এজেন্ডা নিয়ে কুখ্যাত নারীবাদীরা কমিশন দখল করে ইসলামবিরোধী প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তারা দেশের ধর্মপ্রাণ বৃহত্তর নারীসমাজের শত্রু। অধিকারের নামে নারীকে ইউরোপের মতো বাজারিপণ্য ও যৌনদাসী বানানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেমেছে।
কথিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যৌনকর্মীকে ‘শ্রমিক’-এর মর্যাদা দেয়ার প্রস্তাব করে মূলত নারীর মর্যাদাহানি করেছে দাবি করে তারা আরও বলেন, পতিতাবৃত্তি কোন সম্মানজনক পেশা নয়। এটা বরং সমাজের গভীর ক্ষত। সম্মানজনক কর্মসংস্থানের অভাব, ক্ষুধার তাড়না ও নারী পাচারের ঘটনা ছাড়া কোন নারী স্বেচ্ছায় এ পেশায় আসেন না। নারীর সম্ভ্রম ও আত্মমর্যাদার পরিবর্তে শরীর বিক্রিকে প্রাধান্য দিয়ে নারীসত্তার চরম অবমাননা করেছে ওই নারীবাদী কমিশন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নারীর প্রতি জুলুম ও বঞ্চনা রোধ এবং নারীর সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিতে আমরা সহযোগী হতে চাই। কিন্তু নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সরাসরি কোরআনবিরোধী। আলেম সমাজের মতামত ও পরামর্শ না নিয়ে একতরফা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুযোগ নেই। উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টনে কোরআনের নীতিমালা লঙ্ঘিত হয়, এমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। বিয়ে ও তালাক বিষয়ে কোরআনের নির্দেশ উপেক্ষা করে অবাস্তব কোন সংস্কার চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। বৈবাহিক সম্পর্কে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি এনে আমাদের দেশের পরিবারকাঠামো ধ্বংস করার পশ্চিমা প্রজেক্ট আমরা বাস্তবায়ন হতে দিতে পারি না। এছাড়া সব ধর্মের নারীদের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন করার সুপারিশ মূলত বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল। নাগরিকগণ যার যার ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী পরিবার গঠন ও পরিচালনা করবে, এতে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিতান্তই অন্যায্য। এই কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিলের দাবিতে দলে দলে মহাসমাবেশে যোগ দিন।
নেতারা বলেন, রাষ্ট্রসংস্কার কোন পেইড এনজিওবাদী কর্মকান্ড নয়। সংস্কারের নামে পশ্চিমা মূল্যবোধ এদেশে ফেরি করার অপতৎপরতা রুখে দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
এদিকে আজ শনিবার রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে হাটহাজারী উপজেলা হেফাজতের সমাবেশ ও গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী উপজেলা শাখার উদ্যোগে ডাকবাংলো চত্বরে সমাবেশ ও পরে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা হেফাজতের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আল্লামা মুফতি মোহাম্মদ আলী কাসেমীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এমরান সিকদারের সঞ্চালনায় এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির।
কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা জাফর আহমেদ, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মো. আহসান উল্লাহ, উপজেলা হেফাজতের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ, মাওলানা মাহমুদ হোসাইন, পৌরসভা হেফাজতের সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম মেহেদী, মাওলানা জাহাঙ্গীর জাফরাবাদী, নূর মোহাম্মদ, মোরশেদ আলম, মাওলানা হাফেজ আব্দুল মাবুদ, মাওলানা আসাদুল্লাহ, মাওলানা ওজাইর হামিদী, মো. রাশেদ আলম, আবু তাহের রাজিব, মাওলানা জিয়াউল কবির, মো. শহীদ, মাওলানা ওবাইদুর রহমান ও আবরার মিরাজ চৌধুরীসহ উপজেলার সকল ইউনিয়নের সভাপতি, সেক্রেটারিসহ দায়িত্বশীলরা।