পূর্বদেশ ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মিরপুরে গুলিতে দুইজন নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। কাঠমিস্ত্রী নিহতদের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আরো একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
সরকার পতনের দিন ‘পুলিশের গুলিতে’ এক কাঠমিস্ত্রী নিহতদের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। নিহত মো. তারিকের মা মোছাম্মৎ ফিদুশি খাতুন গতকাল সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার আবেদন করেন।- খবর বিডিনিউজের
বিচারক ফারাহ দিবা ছন্দা বাদির জবানবন্দি শুনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীর আইনজীবী মো. লিটন মিয়া জানান, শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামাল ছাড়াও সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহামুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. এ আরাফাত, সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিবির অতিরিক্ত ডিআইজি হারুন অর রশিদ, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, অতিরিক্ত আইজিপি ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নাম মামলায় আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে।
মামলার আরজিতে বলা হয়, গত ৫ অগাস্ট সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার দিকে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে শেরে নগর বাংলা নগর থানার সামনে পশ্চিম আগারগাঁও চৌরাস্তায় ওঠার সময় পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে মো.তারিক গুরুতর আহত হন।
স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চার দিন পর ৯ অগাস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারিক মারা যান।
তারিকের পেটে চারটি এবং হাতে একটি গুলি লাগে বলে আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ছাত্রজনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার বিরুদ্ধে এ নিয়ে মোট ১৫টি মামলা হয়েছে, যার বেশিরভাগই হয়েছে ঢাকায়।
মিরপুরের দুই হত্যা মামলা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মিরপুরে গুলিতে দুইজন নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা করেছেন গত ৪ অগাস্ট মিরপুর গোল চত্বরের কাছে গুলিতে নিহত আব্দুল্লাহ কবিরের স্ত্রী আফসানা আক্তার ওরফে আফসানা ইসলাম। এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৬২ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি করেছেন একই দিনে নিহত লিটন হাসান লালুর ভাই মিলন। এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৪৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।- খবর বিডিনিউজের
উভয় মামলায় আসামির তালিকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীর নাম রয়েছে।
সোমবার ঢাকার হাকিম আদালতে মামলা দুটি দায়ের করা হয়। আলাদাভাবে বাদিদের জবানবন্দি শুনে মহানগর হাকিম মেহেদী হাসান মিরপুর থানার ওসিকে অভিযোগ দুটি নিয়মিত মামলা হিসেবে এফআইএর ভুক্ত করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আদালতকে অবহিত করার নির্দেশ দেন।
আব্দুল্লাহ কবির হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সাবেক সংসদ সদস্য কামাল মজুমদার, সাবেক সদস্য সদস্য ইলিয়াস মোল্লা, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুলাহ আল মামুন, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, অতিরিক্ত আইজিপি ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপি কাফরুল থানার ওসি মো. শামিম, এডিসি ইমতিয়াজ, ডিসি জসিম উদ্দিনের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।
মামলার আরজিতে বলা হয়, গত ৪ অগাস্ট দুপুরে মিরপুর ১০ গোল চত্বর আইডিয়াল স্কুলের সামনে ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ নেওযা ছাত্র জনতাকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসার জন্য স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছিলেন আব্দুল্লাহ কবির। সেখানে পুলিশ, র্যাব, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নির্বিচারে গুলি চালায়। তখন গুলিবদ্ধ এক ছাত্রকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ হন আব্দুল্লাহ কবির। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
লিটন হত্যা মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, ৪ অগাস্ট একটি মিছিলে অংশ নেওয়ার সময় অজ্ঞাত আসামির ছোড়া বুলেটে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান রয়েছেন এ মামলার আসামির তালিকায়। ছাত্রজনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট শেষ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার বিরুদ্ধে এ নিয়ে মোট ১৬টি মামলা হয়েছে, যার বেশিরভাগই হয়েছে ঢাকায়।