সাংবাদিককে ‘খামোশ’ বলে ধমক দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া কামাল হোসেন তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমার বক্তব্য কোনোভাবে কাউকে আহত বা বিব্রত করে থাকে, তাহলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তিনি সারাজীবন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শামিল ছিলেন বলেও দাবি করেন গণফোরামের সভাপতি কামাল।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন। ওই জোট থেকে কামালের দল গণফোরামসহ অন্যান্য দলের নেতারা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবার বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীরও প্রায় দুই ডজন নেতা ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।
বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিককে ধমক দেন কামাল হোসেন।
শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কামাল বলেন, শহীদ মিনারে এসব বিষয়ে কোনো কথা তিনি বলবেন না।
এরপরও সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে থাকেন। একজন বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তারপরও তারা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচন করছে।
এসময় ক্ষেপে ওঠে তিনি বলেন, প্রশ্নই ওঠে না। বেহুদা কথা বল। কত পয়সা পেয়েছ এই প্রশ্নগুলো করতে? কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছ? তোমার নাম কি? জেনে রাখব তোমাকে। চিনে রাখব। পয়সা পেয়ে শহীদ মিনারকে অশ্রদ্ধা কর তোমরা। আশ্চর্য!
পাশে থাকা দুই একজন নেতা এ সময় কামাল হোসেনকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আরেকজন সাংবাদিক এ সময় প্রশ্ন চালিয়ে গেলে ধমকে ওঠেন কামাল।
তিনি বলেন, শহীদদের কথা চিন্তা কর। হে হে হে হে করছে! শহীদদের কথা চিন্তা কর। চূপ কর। চুপ কর। খামোশ।
কামাল হোসেনের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বহু মানুষ। তার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খামোশ’ বললেই মানুষের মুখ বন্ধ হবে না। খবর বিডিনিউজের
এদিকে ওই বক্তব্যের জন্য কামাল হোসেনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া এবং বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকদের দুই সংগঠন বিএফইউজে ও ডিইউজে। বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি ওই ঘটনার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন কামাল হোসেন।
তিনি বলেছেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্মৃতি সৌধের বেদিতে দাঁড়িয়ে আমি বলেছিলাম, আমরা কত মেধাবী সন্তানদের হারিয়ে তবে স্বাধীনতা পেয়েছি। তখন হঠাৎ করে বেদিতেই আমার কাছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের অবস্থান জানতে চাওয়া হলো।
আমি তাৎক্ষণিক সবিনয়ে বলি, আজকে এই দিনে, যেখানে আমাদের গভীর অনুভূতির বিষয়, এই বিষয়ে এখানো কোনো মন্তব্য করতে চাই না। পুনরায় একই প্রশ্ন তুললে আমি একই মনোভাব ব্যক্ত করি।
কিন্তু তৃতীয়বার ভিড়ের মধ্যে থেকে কোথাও অনবরত দুই থেকে তিনবার আমি শুধু ‘জামাত জামাত’ শব্দ শুনতে পাই। তখন আমার খুবই খারাপ লেগেছিল। এবং আমি প্রশ্ন কর্তাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলাম।
কামাল হোসেনের বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলটির নির্বাহী সভাপতি ও ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ একটা বিবৃতি দিয়েছেন, অনলাইনেও দেখলাম।
দুঃখ প্রকাশ করে কামাল হোসেনের এই বিবৃতির পরেও তার প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে অনড় রয়েছে বিএফইউজে ও ডিইউজে।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী রাতে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দুই সংগঠনের নেতারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কামাল হোসেনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।
কামাল হোসেনের বক্তব্য ও আচরণের প্রতিবাদে কাল ঢাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএফইউজে ও ডিইউজে। এছাড়া পরদিন দেশব্যাপী সব ইউনিয়ন ও সাংবাদিক সংগঠনকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের আহব্বান জানিয়েছে বিএফইউজে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী প্রচর চলানোর সময় রাজধানীর ইত্তেফাক মোড়ে তার ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সুব্রত চৌধুরী। গণফোরাম নেতা সুব্রত ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সন্ধ্যা ৬টার সময় ইত্তেফাকের মোড় থেকে আমি দোকানে দোকানে লিফলেট বিতরণ করছিলাম। অভিসার সিনেমা হলের কাছে, তখন ১০-১২ জন ছেলে লাঠি-সোঁটা নিয়ে আমাদের কর্মীদের ওপর আক্রমণ করল।
কর্মীরা আমারে বাঁচাইল। আমি একটা দোকানে ঢুকলাম। ওরা সেখানে ভাঙচুর করল। আধা ঘণ্টার উপরে আমি সেই দোকানে বসেছিলাম।
কোথাও কোনো অভিযোগ করেছেন কি না জানতে চাইলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি বলেন, অভিযোগ লিখতেসি এখন।