পূর্বদেশ ডেস্ক
মশাবাহিত রোগ এডিসে আক্রান্ত আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সোমবার ২ দু’জনসহ চলতি বছরে মোট মৃতের সংখ্যা ১৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। গত একদিনে যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের একজন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা। আরেকজন ঢাকা বিভাগের।
অন্যদিকে, দেশে গত একদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৮৬৬ জন রোগী। এ নিয়ে বাংলাদেশে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৯০০ জনে।
গত একদিনে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩২৭ জন, ঢাকা বিভাগে ১৫৮ জন, চট্টগ্রামে ১২১ জন, বরিশালে ৫৫ জন, খুলনায় ৮৫ জন, ময়মনসিংহে ৩৬ জন রাজশাহী বিভাগে ৫৪ জন, রংপুর বিভাগে ১৮ জন এবং সিলেট বিভাগে ১২ রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ২৭৭২ জন রোগী।
এদিকে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় মশক নিধন অভিযান কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সমন্বয় ও নিবিড়ভাবে তদারকি করতে ১০টি টিম গঠন করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৪টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ৩টি টিম কাজ করবে। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কার্যপরিচালনার জন্য পৃথক একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনসহ সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলা সংক্রান্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের জরুরি সভায় কমিটিগুলো গঠন করা হয়। এছাড়াও, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সাভার, দোহার, তারাব, রূপগঞ্জ ও অন্যান্য পৌরসভার জন্য আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ডেঙ্গুরোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলার কাজ সমন্বয় এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের টিম প্রধান করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম, একেএম তারিকুল আলম, মো. ফজলুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক এএইচএম কামরুজ্জামানসহ স্থানীয় সরকার বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে বছরের আগের যে কোনো মাসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। এ সময় মৃত্যুও হয়েছে বেশি। ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ হাজার ৫৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের।
এর আগে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফেব্রæয়ারি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩৩৯ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১১ জন; যাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিল মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০৪ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। মে মাসে ৬৪৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। জুন মাসে ৭৯৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের।
জুলাই মাসে ২৬৬৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়। আগস্টে ৬৫২১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, যাদের মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৭০৫ জনের মৃত্যুও হয় ওই বছর।