জাহেদুল আনোয়ার চৌধুরী, সীতাকুন্ড
‘ফুলের মতো আপনি ফোটাও গান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গত ৪ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সীতাকুন্ড উপজেলার সলিমপুর ফৌজদারহাট টোল রোডের পশ্চিম পাশে ডিসি পার্কে তৃতীয়বারের মতো মাসব্যাপী চলছে ফুল উৎসব। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এ ফুল উৎসব যতই সময় গড়াচ্ছে, ততই পার্কে বাড়ছে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। শুরুর পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৬ লক্ষাধিকের মত ফুলপ্রেমীদের সমাগম ঘটেছে। যেখানে ফুল উৎসবে আগত দর্শনার্থীর কাছে এ পর্যন্ত টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকার কাছাকাছি। সরকারি অফিস খোলার দিন ফুলপ্রেমীদের আনা-গোনা কিছুটা কম থাকলেও বন্ধের দিন শুক্রবার ও শনিবার তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। রীতিমতো ফুলের রাজ্যে ফুলপ্রেমীদের আনাগোনা যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
ডিসি পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, ১৯৪ একরের জায়গায় গড়ে উঠা ফুল উৎসবের পার্কজুড়ে ফুলপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড়। আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও এক-তৃতীয়াংশ আসছে পরিবার-পরিজন নিয়ে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ১৩৬ প্রজাতির প্রায় লক্ষাধিক ফুলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ ও বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীরা।
গতবারের তুলনায় এবার ফুল উৎসবে বিশেষ আকর্ষণে রয়েছে ভাসমান ফুলবাগান, মাসব্যাপী গ্রামীণ মেলা, মাসব্যাপী মাল্টি কালচার ফেস্টিভ্যাল, শিশুদের জন্য চারটি কিডস জোন। এছাড়াও রয়েছে বেহালার সুর, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনা, ঘুড়ি উৎসব, বইমেলা, পিঠা উৎসব এবং একটি বহু সাংস্কৃতিক সঙ্গীতানুষ্ঠান। দেশি-বিদেশি বাহারি রঙের আকর্ষণীয় ফুলে সুসজ্জিত পার্কে উদ্বোধনের দিন থেকে ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। নগরের ব্যস্ততা শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে ফুলপ্রেমীরা ছুটে আসছেন এই পার্কে। এবার ফুল উৎসব থেকে ফুল কিনে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুযোগও আছে। টিকিট পার্ক কাউন্টার থেকে কেনার পাশাপাশি অনলাইনে সংগ্রহের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। নগরীর টাইগার পাস থেকে ডিসি পার্কে যাতায়াতের জন্য পর্যটক বাস ও শাটল বাস পরিষেবা চালু রয়েছে। ফুল উৎসবের পাশাপাশি পার্কটিতে রয়েছে দুটি বড় লেক, যেখানে নৌকা ভ্রমণ ও কায়াকিংয়ের সুযোগ রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উৎসব গত ৪ জানুয়ারি শুরু হয়ে আগামি ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চট্টগ্রামবাসীর অনুরোধে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় এই ফুল উৎসব আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পর্যন্ত চলবে। ফুল উৎসব ঘিরে পার্কে তিনটি বিনোদন কেন্দ্রের পাশাপাশি ৪২টি দোকানে বিকিকিনি করছে ফুল উৎসবে আসা ফুলপ্রেমীরা। উৎসবের টিকিটের মূল্য দর্শনার্থী প্রতি ৫০ টাকা। গত শুক্রবার বন্ধের দিন থাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পার্কে ২৩ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে। গড়ে প্রতিদিন ১৬ হাজারের মত ফুলপ্রেমী উৎসব দেখতে আসেন।
সীতাকুন্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ফুল উৎসব পরিচালনাকারি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ফুল উৎসবে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে আমরা বিমোহিত। ফুল উৎসবকে ঘিরে প্রতিদিন বাড়ছে দর্শনার্থীর। ফুলপ্রেমীদের ভোগান্তি লাঘবে আমরা টিকিট কাউন্টারও বৃদ্ধি করেছি। ফুল উৎসবে আগত ফুলপ্রেমীদের ফুলের সমারোহে আকর্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানাভাবে আকৃষ্ট করতে সৌন্দর্ষ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও ডিসি পার্ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. আলাউদ্দিন বলেন, গত ৪ জানুয়ারি ফুল উৎসব শুরু হয়ে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চট্টগ্রামবাসীর অনুরোধে ডিসি স্যারের নির্দেশক্রমে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। যেহেতু ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি বিশেষ দিন ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস।’ দিবসটির সাথে ফুল উৎসবের অনেকগুলো সম্পর্ক রয়েছে। তাই আমরা ফুলপ্রেমীদৈর কথা চিন্তা করে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ফুল উৎসব চালু রাখবো। এছাড়া ফুল উৎসবে বর্ণিল ফুলের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অব্যাহত আছে। সেই সঙ্গে রয়েছে পিঠা উৎসবও। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনব্যাপী মাল্টিকালচারাল ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিয়েছিল ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, পূর্ব তিমুর, ভুটান, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়াসহ ১৩টি দেশের শিক্ষার্থীরা। তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশের কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। ৬ ফেব্রুয়ারি ফুল উৎসব ঘিরে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম মাতাবেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড নগর বাউল, আর্বোভাইরাস, আর্টসেল, শিরোনামহীন, অ্যাভয়েডরাফা, তীরন্দাজ ও কাকতাল ব্যান্ডের শিল্পীরা। ডিসি পার্কে আগত দর্শনার্থীদের ওই অনুষ্ঠানে যেতে হলে ফুল উৎসবের টিকিটের পাশাপাশি টাকা দিয়ে আলাদা টিকিট কিনতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, শুরুর দিন থেকে ফুল উৎসবে উপচেপড়া ভিড় ছিল ফুলপ্রেমীদের। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ফুল উৎসবে আগত ফুলপ্রেমীদের পদভারে মুখর ছিল ডিসি পার্ক। তারপর অনেক ফুলপ্রেমী ব্যস্ততার কারণে নাও আসতে পারে। তাদের কথা ও চট্টগ্রামবাসী একাধিকবার আসা ফুলপ্রেমীদের কথা মাথায় রেখে আমরা আগামী ১৪ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত এই ফুল উৎসবের সময় বাড়ানো হয়েছে।