ডিমের দাম বৃদ্ধির পেছনে ‘কারসাজি’

1

বাজারে ডিমের দাম বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘ডিমের দাম বাড়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। ৭০ শতাংশ দাম ফিডের খরচের ওপর নির্ভর করছে। এই ফিডের দাম তো এই সময়ে বাড়েনি। তাহলে দামটা বাড়ল কেন? দাম বৃদ্ধির পেছনে কারসাজি রয়েছে। এটিকে অপরাধ হিসাবে দেখা উচিত। পত্রিকায় খবর এসেছে, আমদানির কারণে ডিমের দাম কমে গেল। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, এখানে একটা কারসাজি আছে। এখানে কোনো একটা পক্ষ সক্রিয়, যারা ডিমের দাম বাড়িয়েছে। তা না হলে কমে কী করে?’ খবর বিডিনিউজের
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়িতে বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন ফরিদা আখতার। প্রতিবছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস পালিত হয়। এবছরের প্রতিপাদ্য ‘ডিমে পুষ্টি ডিমে শক্তি, ডিমে আছে রোগমুক্তি’।
গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের প্রায় একমাস পর হঠাৎ ডিম, সবজি, মাছসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। প্রতিটি ডিমের দাম উঠে যায় ১৫ টাকায়। সরকার ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়ার খবরে গত ৭ অক্টোবর থেকে দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। বাজারে এখন প্রতিটি ১৩ টাকা থেকে সাড়ে ১৩ টাকায় ডিম পাওয়া যাচ্ছে। ডিমের দাম বৃদ্ধির কিছু কারণও তুলে ধরেন কৃষি আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে অন্তর্র্বর্তী সরকারের দায়িত্বে আসা ফরিদা।
তিনি বলেন, ‘ডিমকে অস্থিতিশীল করে দেওয়া হলো। মিডিয়াতেও প্রধান শিরোনাম হিসাবে খবর আসতে শুরু করল যে ডিমের বাজার অস্থির। এটাও দাম বৃদ্ধির একটা কারণ। কিছু খামারি বলছে বন্যার কারণে খামার নষ্ট হয়েছে, সেটা ঠিক আছে। আমাদের দেশে এই সময়টা খাদ্য প্রাপ্যতার দিক থেকে খারাপ সময়। বন্যার কারণে সবজির উৎপাদন কম হচ্ছে। সে কারণে ডিমের ওপর চাপ বাড়ছে’।
পুষ্টির অন্যতম উপাদান ডিমকে সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও দাম নাগালের মধ্যে রাখার কথা বলেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি বছরে ১৩৬টি ডিম প্রতিটি মানুষ খায়, তাহলে কেউ বেশি খাচ্ছে, কেউ আবার খাচ্ছে না। এটা তো ডিম নিয়ে বৈষম্য। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরে ডিমে কেন বৈষম্য থাকবে। শ্রেণি নির্বিশেষে সবার নাগালের মধ্যে ডিমকে নিয়ে আসতে হবে। দাম কমানোর প্রচেষ্টার এটাও একটা কারণ’।
ডিম-মুরগি লালনপালন একসময় গ্রামের নারীদের অর্থ উপার্জনের অন্যতম উপলক্ষ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রামের মহিলারা মুরগি পালতেন এবং ডিম মুরগি স্বামীদেরকে দিয়ে বিক্রি না করিয়ে নিজেরাই বিক্রি করতেন। টাকাটা নিজের কাছেই রাখতেন। সেই বিপণন সিস্টেম এখন কমে গেছে। মহিলাদের একটা আয়ের উৎস কমে যাচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই দিকে একটু ভাবা উচিত। গ্রামের মহিলাদেরকে দিয়ে হাঁসমুরগি লালন-পালন করিয়ে তাদের কাছ থেকে কিনে আনার একটা সহজ ব্যবস্থা করা যায় কিনা’।
জাতীয় পুষ্টি উন্নয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিম বিতরণের প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের মিড ডে মিল হিসেবে ভবিষ্যতে ডিম যুক্ত করা যায় কিনা আমরা চিন্তা করছি। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির নিশ্চয়তা দেওয়া সরকারেরও দায়িত্ব। আপনারা যারা বড় বড় কোম্পানি আছেন তারা সিএসআর হিসেবে হাসপাতালগুলোতে ডিম বিতরণ করতে পারেন’।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, ‘ডিম ও পোল্ট্রি খাত বেকারত্ব বিমোচন ও দারিদ্র বিমোচনে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখতে পারে। এবারের বন্যায় দেশের অনেক স্থানে অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডিমের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটাও একটা কারণ। মওসুমের এই সময়ে সবজির উৎপাদন কমে যায়, ডিমের উৎপাদনও কমে যায়। ফলে ডিমের চাহিদা বেড়ে গিয়ে দামের ওপর একটা প্রভাব পড়ে। ৮০ শতাংশ ডিম উৎপাদন করে প্রান্তিক খামারিরা। আমরা তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে মনোযোগ দেব’।
অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ‘প্রতিবছর এই সময়ে ডিমের দাম বাড়ে। কেবল আমদানি নয়, অনেক জায়গায় আমরা হস্তক্ষেপ করেছি। কবল আমদানির কারণে ডিমের দাম কমেনি। দাম কমার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় হস্তক্ষেপ করেছি। আজকে খামারিরা বলল যে তারা ১১ টাকা করে ডিম বিক্রি করেছে। তাহলে কীভাবে ডিমের দাম বাড়ে, সে বিষয়ে আমাদের সবাইকে নজর রাখতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘ডিম নিয়ে বর্তমান সরকারের তিনটা নীতি। কমদামে ডিম খাওয়াতে হবে, ক্ষুদ্র খামারিদের টিকিয়ে রাখতে হবে, কারণ ৭০ শতাংশ ডিম তারা উৎপাদন করে। আরেকটা হচ্ছে ডিম হতে হবে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর’।
ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াপসার বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ‘অন্য জিনিসের দাম যতটা বেড়েছে, ডিমের দাম ততটা বাড়ে নাই। সম্প্রতি যে দামটা বেড়েছে সেটা কিন্তু কারসাজি করে বাড়ানো হয়েছে। ভোক্তা অধিকার আগে দেখেছিল ৫ থেকে ৬ হাত ঘুরে ডিম ভোক্তার হাতে যায়। এখন দেখা যাচ্ছে ৭ হাত ঘুরে ডিম ভোক্তার হাতে যাচ্ছে। কেন সরকার ৭টা হাত নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, সেটা দেখা দরকার। সরকারের অনেকগুলো হ্যাচারি, প্রকল্প ফার্ম রয়েছে যেগুলো প্রায় নিষ্ক্রিয়। আপনারা না চালাতে পারলে প্রয়োজনে আমাদেরকে দিয়ে দিন। আমরা সরকারের সাথে জয়েন ভেঞ্চারে কাজ করত পারি’।