ডিজির ‘নিরাপদ যাত্রায়’ আগেপিছে রিলিফ ইঞ্জিন

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

রেলওয়ে মহাপরিচালকের চট্টগ্রাম যাত্রা নিরাপদ রাখতে বিশেষ ব্যবস্থায় আগেপিছে রিলিফ ইঞ্জিন রেখেছিল রেলওয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে রেললাইন ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ায় এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়। শেষপর্যন্ত কোনরূপ ইঞ্জিন জটিলতা ছাড়াই মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি ডিজিকে নিয়ে চট্টগ্রাম আসে। রেলওয়ে ডিজি নিরাপদে চট্টগ্রামে আসলেও আগেরদিন (মঙ্গলবার) শমসেরনগরে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস (৭১৯) ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। সিলেটে রিলিফ ইঞ্জিন না থাকায় আখাউড়া থেকে ইঞ্জিন নিয়ে ছয়ঘণ্টা দেরিতে সিলেট পৌঁছে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস। যে কারণে গতকাল উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি যথাসময়ে চট্টগ্রাম না আসায় ইঞ্জিনের অভাবে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস তিন ঘণ্টা দেরিতে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘কানেক্টিং ইঞ্জিন আসতে দেরি হওয়ায় পাহাড়িকা একটু দেরিতে চট্টগ্রাম ছেড়েছে। ডিজি স্যার আসার পথে আলাদা প্রটোকলে কোনো ইঞ্জিন রাখা হয়নি। স্বাভাবিক নিয়মে লাকসামে আমাদের বাড়তি ইঞ্জিন থাকে সেটাই রাখা ছিল।’
জানা যায়, রেলের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন গতকাল বুধবার সকালে মহানগর প্রভাতী ট্রেনযোগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসেন। ডিজির আসাকে কেন্দ্র করে ৩০১০ নাম্বারের ইঞ্জিন লাকসামে রাখা হয়। একইভাবে ২৯৩৬ ইঞ্জিনটিও আখাউড়ায় ছিল। আখাউড়ায় আগে থেকে রাখা ২৯২৪ নাম্বারের রিলিফ ইঞ্জিনে সমস্যা থাকায় ২৯৩৬ ইঞ্জিনটি রাখা হয়। আবার পাহাড়তলি থেকে একটি ইঞ্জিন চিনকি আস্তানা পর্যন্ত গিয়ে ফেরত এসেছে। রেল মহাপরিচালকের যাত্রা নিরাপদ করতে এমন উদ্যোগ নেয়া হলেও গত মঙ্গলবার শমসেরনগরে ইঞ্জিন বিকল হলে কাছাকাছি রিলিফ ইঞ্জিন না থাকায় ছয়ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের।
শমসেরনগর রেল স্টেশন মাস্টার জামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন শমসেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছার পর ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পর আখাউড়া থেকে রিলিফ ইঞ্জিন আসে। রিলিফ ইঞ্জিন আসার পর ট্রেনটি সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।’
ইঞ্জিন বিকলে আটকে পড়া ট্রেনটি রিলিফ ইঞ্জিন নিয়ে সিলেটে পৌঁছতে দেরি করায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে দেরিতে ছেড়ে আসে। যে কারণে গতকাল ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে সিলেট ছেড়ে যেতে তিন ঘণ্টা দেরি হয়। গতকাল সকালে ৮টার দিকে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সিলেটের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছাড়ে ১১টায়।
রেল কর্মচারীরা বলেন, রেলে ইঞ্জিন সংকট থাকায় ডিজি স্যার পথিমধ্যে আটকে যাবেন এই ভয়ে অতিরিক্ত ইঞ্জিন প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। স্যারের আগেপিছে রিলিফ ইঞ্জিন রাখা ছিল। স্যারের যাত্রা নিরাপদ রাখতে যে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে একই ব্যবস্থা প্রতিটি ট্রেনের যাত্রাপথে রাখা উচিত। কাছাকাছি রিলিফ ইঞ্জিন থাকলে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সচল করা সম্ভব হয়। তবে রেলে বর্তমানে যে ইঞ্জিন সংকট এতে স্যার যে সুবিধা পেয়েছে তা যাত্রীরা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
চট্টগ্রাম রেল স্টেশন ম্যানেজার মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক পূর্বদেশকে বলেন, ‘উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দেরিতে আসায় পাহাড়িকা স্টেশন ছেড়েছে দেরিতে। পাহাড়িকা যাত্রী নিয়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না। বাকিগুলো কন্ট্রোল থেকে জেনে নিতে হবে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগের আহবায়ক মো. মজিবুর রহমান ভুঁইয়া পূর্বদেশকে বলেন,‘রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ইঞ্জিন সংকট প্রকট। যে ইঞ্জিনগুলো আছে সেগুলো পথিমধ্যে বসে যায়। ইঞ্জিন সমস্যার কারণে পথিমধ্যে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’