চকরিয়া প্রতিনিধি
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডাকাতি প্রতিরোধে সেনাবাহিনীর অভিযানকালে সশস্ত্র ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের গুলি এবং ছুরিকাঘাতে তানজিম ছরোয়ার নির্জন (২৩) নামে এক সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার ভোররাত ৪টার দিকে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার একটি বাড়িতে ডাকাতি প্রতিরোধে সেনাবাহিনীর অভিযানকালে এ ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে সেনাবাহিনীর একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে। এছাড়া আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে।
এতে উল্লেখ করা হয়, সোমবার রাত ৩টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে চকরিয়া ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল দ্রুত সেখানে যায়। এরপরে ৪টার দিকে অভিযান পরিচালনাকালে ৭/৮ সদস্যের একটি ডাকাতদল সেনাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম ডাকাত দলের কয়েকজনকে তাড়া করেন। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা তাকে ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত তানজিম ছারোয়ার নির্জন টাঙ্গাইল জেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মেধাবী এ সেনা কর্মকর্তা পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্স শেষে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে ২০২২ সালের ৮ জুন আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন। দেশমাতৃকার সেবায় এ তরুণ সেনা কর্মকর্তার আত্মত্যাগ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এদিকে সেনা অভিযানের সময় ঘটনাস্থল থেকে ৩ জন ডাকাতকে আটকসহ একটি দেশে তৈরি বন্দুক, ৬ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ডাকাত সন্দেহে আরও ৩ জনকে আটক করা হয় বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের আলোচিত রিজার্ভ পাড়া, কাটাখালী ও ডুমখালী এলাকাটি হচ্ছে সংরক্ষিত বনভূমি। এলাকাটি ডাকাত-সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে ওঠে কয়েক বছর আগে থেকে। সেখান থেকেই আশপাশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র ডাকাতি, দস্যুতা, ধর্ষণসহ নানা অপরাধ কর্মকাÐ করে আসছিল সশস্ত্র ডাকাত ও সন্ত্রাসীদল। কিন্তু বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব অপরাধীদের অপতৎপরতা দমাতে তেমন সফলতা দেখাতে পারেননি।
স্থানীয়রা আরও জানান, অর্ধ শতাধিক ডাকাত-সন্ত্রাসীদের হেফাজতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। এবার সেই ডাকাত-সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহায় পায়নি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাও।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মনজুরুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, অভিযান চালাতে গেলে সশস্ত্র ডাকাত-সন্ত্রাসীরা যৌথবাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করে। অভিযানের সময় এক ডাকাতকে ধরা হলে সেই ডাকাত লেফটেন্যান্ট তানজিমকে ছুরিকাঘাত করে। একটি গুলিও করা হয় তাকে লক্ষ্য করে। তিনি গুরুতর আহত হলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
ওসি আরও জানান, ঘটনার পর সকাল ১১টার দিকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ, সহকারী পুলিশ সুপার চকরিয়া সার্কেল রাকিব উর রাজা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় পুলিশ সুপার মহোদয় ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের চিরুনি অভিযানের কথা জানান।