নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরীর বাকলিয়া কল্পলোক আবাসিক এলাকায় ২ রোহিঙ্গা নারীর বাসায় ডাকাতি করতে গিয়ে আটক হয়েছেন পুলিশের ১ এএসআইসহ ৬ জন। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। গত শুক্রবার পুলিশ অভিযুক্ত ওই এএসআইসহ ৬ জনকে আদালতে তুললে আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আটক ৬ জন হলেন, বাকলিয়া থানার চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফারুক মিয়া, নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া সোহেল রানা, তার সাথে থাকা সহযোগী জয়নাল আবেদীন, মো. আকবর, ফজলুল করিম ও মিজানুর রহমান।
ডাকাতির শিকার দুই রোহিঙ্গা নারী হলেন কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার বালুখালী রোহিঙ্গাক্যাম্পের লাল মিয়ার মেয়ে বিবি জান (৩৫) এবং ভাইয়ের স্ত্রী রোকসানা (২৫)। তারা রোহিঙ্গাক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসে নগরীর বাকলিয়া থানার কল্পলোক আবাসিক এলাকার নর্ম ভিলা নামক একটি ভবনের দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় মামলা হবে। এছাড়া যে রোহিঙ্গাদের বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তারা ক্যাম্প থেকে কিভাবে পালিয়ে এলো, তা খতিয়ে দেখা হবে। পরবর্তীতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের ফেরত পাঠানো হবে।
এদিকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনায় ওই ভবনের কেয়ারটেকার আবদুল আজিজ বাদী হয়ে ডাকাতির অভিযোগে আটক ৬ জনসহ মোট ৯ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছেন। আটক ৬ জন ছাড়াও এজাহারে মোরশেদ, ওমান ও শাহীন নামে ৩ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, ‘একটি ভবনে থাকা রোহিঙ্গাদের বাসায় ডাকাতি করে পালানোর সময় এক সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিসহ মোট ৫ জনকে আটকে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। আর এ ঘটনায় জড়িত পালিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যকে বাকলিয়া থানা পুলিশই আটক করে।’
ভবনের কেয়ারটেকারের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কেয়ারটেকার আবদুল আজিজ গত দুইমাস আগে দুটি ফ্ল্যাট ওই দুই রোহিঙ্গা নারীর বাবা ও শ্বশুরকে ভাড়া দেন। গত ৫ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে আসামিরা তার কাছে ভবনের মালিকানাসহ রোহিঙ্গাদের ফ্ল্যাটের বিষয়ে জানতে চান। তাদের সেখানে নিয়ে গেলে ‘পুলিশের লোক’ এবং ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে তল্লাশি চালায়।
একপর্যায়ে তারা আলমারির চাবি নিয়ে ৩৫ হাজার টাকা, ৪ জোড়া কানের দুল, ৩টি আংটি, ২ জোড়া বালা ও একটি লকেটসহ মোট ৮ ভরি ওজনের স্বর্ণ লুট করে নিয়ে নেয়। এসময় ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে কেয়ারটেকার কথাবার্তা শুনে বুঝতে পেরে সতর্ক হয়ে যান। একপর্যায়ে ডাকাতি করে পালানোর সময় স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে তাদের মধ্যে ৫ জনকে ধরে ফেলে।
বাকলিয়া থানা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত ডাকাতির পরিকল্পনা ছিল সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া সোহেলের। তিনি বান্দরবান থেকে ডিক্লারেশন নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বের হওয়া একটি আঞ্চলিক পত্রিকার কার্ড ব্যবহার করে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। তার কাছেই রোহিঙ্গা ওই দুই নারীর বাসা নেওয়া এবং তাদের কাছে থাকা স্বর্ণালংকারের বিষয়ে তথ্য ছিল। আর পুলিশ সদস্যসহ অন্যদের নিয়ে তল্লাশির নামে আতঙ্ক তৈরি করে এসব সম্পদ লুট করতে চেয়েছিলেন তারা।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন বলেন, ‘আটক ৬ জনকে ভবনের কেয়ারটেকার বাদী হয়ে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের মধ্যে থাকা পুলিশ সদস্যকে ইতিমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ওই দুই নারী কিভাবে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসে বাসা ভাড়া নিল এটি আমরাও খতিয়ে দেখছি। ইতিমধ্যে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এই রোহিঙ্গাদের হেফাজতে নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’