নিজস্ব প্রতিবেদক
দেড় বছর ধরে মালামাল আটকে রাখার অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার এক ঠিকাদার। সংস্থাটির তালিকাভুক্ত এই ঠিকাদারের প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল আটকে আছে ওয়াসাতে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় এসব মালামালের মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে ওয়াসা বলছে, এসব মালামাল গ্রহণ না করে ফেরত দেয়া হয়েছে। তবে এ দাবির স্বপক্ষে কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি সংস্থাটি।
সূত্র বলছে, ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট এয়ারকন্ডিশনার (এসি) সহ বিভিন্ন মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ প্রায় ওয়াসার তালিকাভুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। একই বছরের ১ নভেম্বর তারিখে মালামালগুলো সরবরাহ করা হয়। ১২ নভেম্বর ‘পরিদর্শন কমিটি’ মালামালগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। পরিদর্শন প্রতিবেদনে মালামালগুলো ‘দরপত্রের স্পেসিফিকেশন মোতাবেক সঠিক পাওয়া গিয়েছে’ এমন মন্তব্য করে স্বাক্ষরও করেছেন কমিটির তিন সদস্য। তবে পরিদর্শন কমিটির অপর একজন সদস্য এতে স্বাক্ষর করেননি। পরবর্তীতে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন- এমন অভিযোগে চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের কার্যাদেশ বাতিল করে ওয়াসা। পুনরায় টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করোনেশন কর্পোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় ওয়াসা।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত¡াধিকারী আরিফ চৌধুরী বলেন, মালামালগুলো সরবরাহ করার পর আমাকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এমডির ভাগিনাকে কাজটি দিতে বলে। এক পর্যায়ে আমি যৌথভাবে কাজ করতে রাজিও হয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের চাপে পড়ে আমি সরবরাহ করতে ব্যর্থতার চিঠি দিতে বাধ্য হই। ওয়াসা আমার চেয়ে বেশি দামে করোনেশন কর্পোরেশন থেকে একই পণ্য কিনেছে। আবার আমার মালামালগুলো আমাকে বুঝিয়ে দেয়নি।
তিনি বলেন, পরিদর্শন কমিটির তিনজন আমার মালামাল সঠিক হিসাবে বুঝে নেয়। কিন্তু একজন অদৃশ্য কারণে এতে স্বাক্ষর করেননি। আমার কার্যাদেশ বাতিল করায় ৬ লক্ষ টাকার জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এখন আমার ৪৫ লক্ষ টাকার মালামাল বুঝিয়ে না দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আমি সরবরাহ করা মালামাল ফেরত চেয়ে ঘুরছি।
দরপত্র অনুযায়ী, ২ টন এসি ১৬টি, ৩ টন এসি ১১টি এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস মালামাল সররবাহ করার কথা ছিল চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের। এরমধ্যে ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ২ টন শার্প ইনভেটর ১৬টি, ২ টন শার্প আউটডোর ১৬টি, মেটাল বোর্ড ৫টি এবং ক্যাবল ৫ কয়েল সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। ২৪ নভেম্বর তারিখে কাজটি করতে অপরাগতা প্রকাশ করে সরবরাহকৃত মালামাল ফেরত চায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। মালামাল ফেরত চেয়ে পরবর্তীতে একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর, চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এবং সর্বশেষ গতকাল ৬ অক্টোবর ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয় চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু মালামাল ফেরতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি ওয়াসা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ অর্ধেক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছিল। স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ না করার কারণে সেগুলো গ্রহণ করা হয়নি। আমরা সময়ও বাড়িয়েছিলাম। পরে তিনি নিজে লিখিত জানিয়েছিলেন মালামাল সরবরাহ করতে পারবেন না। যার কারণে ওনার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। মালামাল গ্রহণ না করলে সেটা ফেরত দেয়ার কিছু নেই। যেটা গ্রহণ করিনি সেটা তখনই ওনি নিয়ে যাবেন।
ওয়াসার কাগজপত্রে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের মালামালগুলো গ্রহণের প্রমাণ থাকলেও এসব মালামাল ফেরত দেয়ার কোনো তথ্য নেই। মালামালগুলো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেয়ার কোনো ডকুমেন্ট সংস্থাটি দেখাতে পারেনি।
ওয়াসার শেখ হাসিনা পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রবিউল হোসেন বলেন, মালামালগুলো পরিদর্শন করার সময় কিছু ত্রæটি ধরা পড়ে। যে ব্র্যান্ডের পণ্য দেয়ার কথা ছিল সেটা দেয়নি। উপরে স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছিল। এসব পণ্য গ্রহণ না করে ফেরত দেয়া হয়েছিল। তখনই আমরা পণ্যগুলো ফেরত দিয়েছি।