নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের বিভিন্ন রেল স্টেশনে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুদক। আসন্ন ঈদুল আজহায় যাত্রী হয়রানি যাতে না হয় সে জন্য হয়রানির প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করতেই এমন অভিযান চালানো হয়। হঠাৎ চালানো এমন অভিযানের সুফলও মিলেছে। অভিযানকালেই ধরা পড়েছে বেশ কিছু অনিয়ম। মিলেছে কালোবাজারির তথ্যও। এমনকি ট্রেনের খালি থাকা সিটে বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহনের প্রমাণও পেয়েছে দুদক। আর এসব কাজে জড়িত রয়েছে রেল স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আরএনবি সদস্য, ট্রেনে থাকা টিটি ও গার্ডরা।
অভিযান চলাকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক সায়েদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্টেশন ম্যানেজারসহ আরএনবির যারা স্টেশনে দায়িত্বে আছেন তারা টিকেট কালোবাজারির সাথে যুক্ত আছেন এরকম একটি অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েছি। আমরা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। আমরা কিছু ভিডিও ফুটেজ কালেক্ট করেছি। টিকিটের মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা রাখা হচ্ছে, টিকিট ছাড়াই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। কিছু আরএনবি সদস্য টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত। টিটিইর সামনেই কিছু এটেনডেন্ট আছে যারা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেয়। যারা এসব কাজের সাথে জড়িত তাদের নাম, ঠিকানা ও পদবী সংগ্রহ করেছি। আর কিছু বিষয় যাচাই বাছাই করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবো।’
জানা যায়, দুদক কর্মকর্তারা বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে অভিযান চালায়। তারা কিছুক্ষণ স্টেশনে ঘুরে পরে স্টেশন ম্যানেজারের কাছে গিয়ে সন্দেহভাজন কয়েকজনের বিষয়ে জানতে চান। আরএনবি ও রেলের টিকিটের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন স্টেশনে অনিয়ম দুর্নীতি সাথে জড়িত বলে দুদক কর্মকর্তারা জানালে এসময় স্টেশন ম্যানেজার কোনরূপ সদুত্তোর দিতে পারেননি। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে অভিযান শুরু করে দুদক। এসময় দুদক কর্মকর্তারা প্রতিটি বগিতে ওঠে সেখানে দায়িত্বরত প্যাসেঞ্জার গাইডদের সাথে কথা বলেন। কয়েকটি বগিতে টিকিট বিহিন যাত্রী থাকার তথ্য পান। এসব যাত্রীরা প্রতিটি বগিতে থাকা একজন করে যে প্যাসেঞ্জার গাইড আছে তাদের সহযোগিতায় বিনা টিকিটে ট্রেনযাত্রা করছেন। এই ট্রেনে বগিতে দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন প্যাসেঞ্জার গাইড সরাসরি বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহনে জড়িত থাকার সত্যতা পেয়েছে দুদক।
চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিক পূর্বদেশকে বলেন, ‘দুদক অভিযানে এসে টিকিট কালোবাজারির কথা বলেছে। কিন্তু কালোবাজারি খুঁজে পায় নাই। পরে আরএনবির কয়েকজনকে নিয়ে আসে। কাউন্টারে একটি টিকিট নিয়ে কথা হয়। কিন্তু ১২ ঘণ্টা আগে টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়। কেউ হয়তো সেটি ধরে রেখে পরে নেয়নি। ১১টা ৪১ মিনিটে টিকিটটি দেয়া হয়। তা নিয়েই উনারা আপত্তি করেছে। অথচ টিকিট অনলাইনে কোন অবস্থায় আছে তা যে কেউ দেখতে পারবে। আর ট্রেনের ভেতরে বিনা টিকিটে যাত্রী থাকলে সেটি আমরা কিভাবে দেখবো। কারণ আমার স্টেশনে বিভিন্ন দিক দিয়ে মানুষ প্রবেশ করে। স্টেশনের ভেতর দিয়ে কেউ বিনা টিকিটে যেতে পারে না। আর যে গাইডগুলোর বিষয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেগুলো অনবোর্ডে কর্মরত।’