টোল আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশও পূরণ হয়নি

3

এম এ হোসাইন

সমীক্ষা অনুযায়ী চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দৈনিক ৮১ হাজার গাড়ি চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। গত ৩ জানুয়ারি থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু হয়েছে। দুই সপ্তাহে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশও পূরণ হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও এতে সন্তুষ্ট বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ। পুরো কাজ শেষ হলে বর্তমানে চলাচল করা গাড়ির সংখ্যা দ্বিগুণে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন সংস্থাটি।
চুয়েট ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্ট অ্যান্ড কনসালটেশন কর্তৃক পরিচালিত একটি সমীক্ষায় পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে প্রতিদিন প্রায় ৮১ হাজার ৪৭১টি যানবাহন চলবে। তবে বর্তমানে এ সংখ্যা লক্ষ্যের তুলনায় অনেক কম। সিএনজি ট্যাক্সি এবং প্রাইভেটকারই মূলত চলাচল করছে এই উড়াল সড়কে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যানজট নিরসনে নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (শহীদ ওয়াসিম আকরাম ফ্লাইওভার) নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। গত ৩ জানুয়ারি থেকে টোল আদায় শুরু হওয়ার পর দৈনিক সাত হাজারেরও কম যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছে। এর ফলে সিডিএর আয়ের লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে সংস্থাটি আশাবাদী, র‌্যাম্পগুলো চালু হলে চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা এবং টোল আদায়ের পরিমাণ বাড়বে।সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম বলেন, টোল আদায়ের আগে থেকেই এক্সপ্রেসওয়ে চালু করা হয়েছিল। তখন যে গাড়ি চলাচল করেছে, সেটা আমরা গণনা করেছি। টোল চালু হওয়ার পর তার থেকে কিছুটা গাড়ি কমেছে। সমীক্ষায় যেটা ছিল, সেটা থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। এখন ৭ হাজারের মতো গাড়ি চলাচল করছে। র‌্যাম্প চালু হলে সেটা ১২/১৪ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।
মন্ত্রণালয় থেকে সিডিএকে এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ ধরনের গাড়ি চালানোর অনুমোদন দিয়ে টোল হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কন্টেইনার ট্রেইলর ও মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রিকশা ও ঠেলাগাড়ির বিষয়টি বিবেচনায়ও আনা হয়নি। এই চার ক্যাটাগরির গাড়ি বাদ দিলেও সমীক্ষায় উল্লেখিত অপরাপর গাড়ির সংখ্যা থাকে ৬০ হাজার ৩২টি। অথচ গাড়ি চলছে ৭ হাজারেরও কম। এর মধ্যে সিএনজি ট্যাক্সি এবং প্রাইভেটকারের সংখ্যাই বেশি।
বর্তমানে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচল করছে। এগুলোর মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশার টোল ৩০ টাকা, প্রাইভেটকার ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, চার চাকার মিনিবাস ও ট্রাক ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ৬ চাকার ট্রাক ৩০০ টাকা এবং কাভার্ডভ্যান চলাচলে দিতে হচ্ছে ৪৫০ টাকা।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, কানেকটিভিটি বাড়ানো গেলে গাড়ি চলাচল আরও বাড়বে। র‌্যাম্পগুলোর কাজ শেষ হলে দ্বিগুণ গাড়ি চলাচল করবে। রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের সামান্য খরচ হচ্ছে। সে তুলনায় টোল আদায় অনেক বেশি।
নগরীর যান চলাচলে গতি আনতে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াসা মোড় থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পটির পুরো অর্থায়ন করে সরকার। বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারীদের মুরাদপুর অথবা ষোলশহর দুই নম্বর গেটের বায়েজিদ রোডের বেবি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার হয়ে ওয়াসা মোড়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে হচ্ছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এবং জনবহুল এলাকার মানুষকে র‌্যাম্পে উঠতে হলে উল্টো ঘুরে যানজট ঠেলে এগুতে হচ্ছে। তাই বহু ব্যবহারকারী এত ঘোরাঘুরি না করে নিচের সড়ক কিংবা সাগরিকা হয়ে রিং রোড ধরে পতেঙ্গার দিকে যাচ্ছে। ফলে এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সংখ্যা প্রত্যাশার তুলনায় কমে গেছে। জিইসি মোড়ের র‌্যাম্পটির নির্মাণকাজ চলছে। এটি চালু হলে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং আগ্রাবাদসহ অন্যান্য র‌্যাম্প চালু হলে গাড়ির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারীরা পতেঙ্গা প্রান্তে ওঠানামা করতে পারছেন। আর পতেঙ্গা থেকে উঠে কেবলমাত্র লালখান বাজারে নামার সুযোগ রয়েছে।