পেকুয়া প্রতিনিধি
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কক্সবাজারের রামু উপজেলার বাইপাসের ফুটবল চত্বর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার গ্রেপ্তারের খবরে এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখা গেছে। র্যাব-১৫ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব জানায়, জাহেদুল ইসলাম রামু এলাকায় আত্মগোপনে আছেন- এমন সংবাদের ভিত্তিতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিযান চালানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ফুটবল চত্বর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আটক জাহেদ চকরিয়া-পেকুয়া আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের অন্যতম বিশস্ত সহযোগী ছিলেন। ভ‚মি দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কাজে নেতৃত্ব দিতেন। তিনি টৈটং তথা পেকুয়ায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন।
তাছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর হামলা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি, অগ্নি সংযোগ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত বলে জানায় র্যাব ।
পেকুয়া থানার পুলিশ জানায়, জাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত পেকুয়ার ওয়াসিম হত্যা মামলা, চকরিয়ায় বিএনপির গাড়িবহরে হামলা ও হত্যাচেষ্টা মামলা এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টৈটং বটতলী শফিকিয়া মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে বিএনপি কর্মীকে হত্যাচেষ্টার মামলাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
২০ বছর ধরে জাহেদুল ইসলাম টৈটং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। বিগত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি গঠন করেন সশস্ত্র সংগঠন ‘দা বাহিনী’। ভ‚মি দখল, পাহাড় দখল, চাঁদাবাজি, দোকান দখল, মানুষের বসতবাড়ি দখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এ বাহিনীর আতঙ্কে থাকত এলাকার মানুষ। তার বাড়ি টইটংয়ের পন্ডিত পাড়ায়। তিনি ওই এলাকার মৃত নুরুল ইসলাম ওরফে নাবালক মিয়ার ছেলে।
আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহেদ। জায়গা দখলে বাঁধা দেওয়ায় দা বাহিনীর হাতে খুন হন টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবদুল জলিলের বাবা উকিল আহমেদ। উকিল আহমেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন দা বাহিনীর প্রধান নাছির উদ্দিন। তবে তৎকালীন সংসদ সদস্য ও দলের প্রভাব খাটিয়ে জাহেদুল ইসলাম ওই হত্যা মামলা থেকে রেহাই পান বলে অভিযোগ করেন উকিল আহমদের ছেলে আবুল কালাম আজাদ।
করোনার সময় অনুদানের ১৫ টন চাল আত্মসাৎ করে আলোচনায় আসেন জাহেদুল। পুরো এলাকায় একনামে প্রকাশ হয়েছিল চাল চোর জাহেদ চেয়ারম্যান নামে। এরপর জাহেদুল ইসলামকে বরখাস্ত করে টৈটং ইউপির চেয়ারম্যান পদ শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কালোবাজারির অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তবে বছর না ঘুরতেই সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের ছত্রচ্ছায়ায় তিনি এলাকায় ফেরেন। শূন্য পদে চেয়ারম্যান নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আবারও তিনি প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বলে এলাকার মানুষের দাবী।
টৈটং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জেডএম মোসলেম উদ্দিন বলেন, জাহেদের কথায় থানা-পুলিশ উঠত আর বসত। গত ১৫ বছর টৈটংয়ে তিনিই ছিলেন ক্ষমতাধর প্রভাবশালী ব্যক্তি। নির্যাতন আর মামলার ভয়ে মুখ খুলত না কেউ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাহেদের ত্রাসের রাজত্বে ধস নামে।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, তিনি ৫ আগস্টের পরে এ থানায় যোগ দেন। জাহেদ চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি শুনেছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান।