টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের প্রভাব পড়েছে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যে। টেকনাফ স্থলবন্দরে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। সীমান্ত এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যেও ভাটা পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার থেকে কোনও পণ্যবাহী ট্রলার আসেনি। মূলত জলপথে ‘আরাকান আর্মির প্রতিবন্ধকতায়’ স্থলবন্দরে পণ্যেবাহী ট্রলার আসছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
স্থলবন্দরের কাস্টম সূত্রে মতে, মিয়ানমার থেকে সবশেষ ৩ ডিসেম্বর পণ্যবাহী জাহাজ এসেছিল। গত ৮ ডিসেম্বর নাফ নদীর ওপারে মংডু শহর দখলে নেয় আরাকান আর্মি। মূলত তাদের প্রতিবন্ধকতার কারণেই এরপর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে রাখাইনের রাজধানী সিত্তে (পূর্বনাম আকিয়াব) থেকে কোনও পণ্যেবাহী ট্রলার আসেনি। বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার প্রতিবেশী দেশটির দুপক্ষের সঙ্গেই আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। শিগগিরই ভালো ফল আসবে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
জানা গেছে, আগে টেকনাফ বন্দরে মাসে অন্তত ২০০ ইঞ্জিনচালিত বড় বোটে পণ্য আনা-নেওয়া হতো। গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে টেকনাফ বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম অনেকটাই বন্ধ রয়েছে। ডিসেম্বরে স্থলবন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় মাত্র ৬ কোটি টাকা। যেখানে জানুয়ারিতে আদায় হয়েছিল ২০ কোটি টাকা। স্বাভাবিক সময়ে ৪০-৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয় টেকনাফ স্থলবন্দরের মাধ্যমে। এছাড়া স্বাভাবিক সময়ে বন্দরে প্রতিদিনই ১৫-২০টি নানা ধরনের ট্রলার ও জাহাজ থাকে।
বন্দরের কাস্টম কর্মকর্তারা জানান, গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ২৩ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৭ হাজার মেট্রিক টন পণ্যে আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে সরকার ২৫৭ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। গেলো বছর (২০২৪-২৫) অর্থ বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ হাজার মেট্রিক টন আমদানি হয়েছে। যার ফলে সরকার ৮৭ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। রাখাইনে যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরের তুলনায় ১৭০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছি।
এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক কর্মকর্তা এম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, টেকনাফ সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মি দখলের পরে মূলত এ বন্দরে পণ্যেবাহী জাহাজ আসেনি। কারন তারা (আরাকান আর্মি) প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সেজন্য পণ্যে জাহাজ আসতে পারছে না। তবে সরকার সে দেশের দুই পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা করছে, যাতে সীমান্তের বাণিজ্যে স্বাভাবিক থাকে।
গত সোমবার (৬ ডিসেম্বর) টেকনাফ সদরের কেরুনতলী এলাকায় স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, কোলাহলপূর্ণ বন্দরটি এখন প্রায় জনমানবশূন্য। জেটিঘাটগুলো পড়ে আছে ফাঁকা।
এসময় কথা হয় স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনি বলেন, রাখাইনে যুদ্ধের কারণে অনেক দিন ধরে ব্যবসা বন্ধ আছে। এতে আমাদের অনেক লোকজন কর্মহীন দিন কাটছে।
টেকনাফ বন্দরের মহাব্যবস্থাপক জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার থেকে কোনও পণ্যেবাহী জাহাজ আসেনি। মূলত রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখলের নেওয়ার পর কোনও পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে আসেনি। তবে সিমেন্টসহ কিছু পণ্যে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে যাচ্ছে।