টিসিবি’র পণ্য নিতে ডিলারদের অনাগ্রহ

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পণ্য বিতরণেও অস্তিরতা বিরাজ করছে। কাউন্সিলররা অনুপস্থিত থাকা স্বত্তে¡ও মহানগরে নিয়মিত টিসিবি পণ্য বিতরণ হলেও উপজেলায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সেখানে নিয়মিত বিতরণ হচ্ছে না টিসিবি পণ্য। দেশের চলমার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক ডিলার পণ্য উত্তোলন না করায় টিসিবি পণ্য বিতরণে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো উপজেলায় প্রশাসনের সহায়তায় পণ্য বিতরণ চলছে। মুদি দোকানির নামে আওয়ামী লীগ নেতারাই এসব ডিলারের নিয়ন্ত্রক হওয়ায় এমন ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আগামি ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিলাররা আগস্ট মাসের বরাদ্দকৃত পণ্য উত্তোলন না করলে ডিলারশিপ বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে টিসিবি কর্তৃপক্ষ।
ট্রেডিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি) চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘মহানগরের সব ওয়ার্ডে নিয়মিত পণ্য যাচ্ছে। উপজেলায় ডিলাররা পণ্য নিতে সমস্যা করছে। বিশেষ করে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় ডিলাররা পণ্য নিতে চাচ্ছে না। আগস্ট মাসের পণ্য উত্তোলনের সময় ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আছে। এরপরেই বুঝবো আসলে কারা পণ্য নিচ্ছে না। কোন ডিলার পণ্য নিবে সেটি ডিসি অফিস দেখে। উনারা যে ডিলারের অনুক‚লে বরাদ্দ দিবে আমরা তাদের পণ্য ডেলিভারি দিব। তবে নিয়মিত কোনো ডিলার পণ্য না নিলে ডিসি অফিসের সুপারিশের ভিত্তিতে ডিলারশিপ বাতিল করা হবে’।
বর্তমানে প্রতিজন গ্রাহক ৪৭০ টাকায় এক প্যাকেজ পণ্য সংগ্রহ করতে পারে। এরমধ্যে মশুর ডাল দুই কেজি প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে ১২০ টাকা, সয়াবিন তেল দুই লিটার (প্রতি লিটার ১০০ টাকা দরে) ২০০ টাকা, চাল ৫ কেজি প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে ১৫০ টাকা।
টিসিবি চট্টগ্রামের গত জুলাই মাসের হালনাগাদ তথ্যনুসারে, চট্টগ্রামে ২০৮ জন ডিলার পণ্য বিক্রি করে। এরমধ্যে মহানগরে ১৪২ জন, উপজেলায় ৬৬ জন। উপজেলাগুলোর মধ্যে কর্ণফুলীতে দুই জন, আনোয়ারায় তিন জন, ফটিকছড়িতে চার জন, হাটহাজারীতে ছয় জন, বোয়ালখালীতে তিন জন, রাউজানে ছয় জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৫ জন, বাঁশখালীতে ৫ জন, চন্দনাইশে ৫ জন, সীতাকুন্ডে চার জন, পটিয়ায় চার জন, মিরসরাইয়ে সাত জন, সাতকানিয়ায় ছয় জন, লোহাগাড়ায় তিন জন ও সন্দ্বীপে তিন জন ডিলার আছে।
রাউজানের ডিলার মেসার্স আজমীর স্টোরের মালিক মোহাম্মদ মহসীন চৌধুরী নিজ থেকেই লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করেছেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৮ আগস্ট তাঁর ডিলার লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। যে কারনে তিনি পণ্য উত্তোলন করেননি। মোহাম্মদ মহসীন চৌধুরী বলেন, ‘দুই বছর ব্যবসা করে চার লাখ টাকার মতো আয় করেছি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আমার ৮ লক্ষ টাকার মালামাল ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউন থেকে নিয়ে গেছে। যে কারনে আর ব্যবসা করবো না বলে ডিলারশীপ বাতিল করেছি’।
রাঙ্গুনিয়ার ডিলার মনিন্দ্র বড়ুয়া বলেন, ‘সরফভাটা ও বেতাগীতে প্রশাসনের উপস্থিতিতে পণ্য বিতরণ করেছি। বাকিরা পণ্য উত্তোলন করেছে কিনা বলতে পারবো না’।
টিসিবি ও ডিসি অফিসের দুইজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিলার হিসেবে যারা আছেন তাদের বেশিরভাগই রাজনীতিবিদ। স্থানীয়ভাবে মুদি ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করে দোকানের নামে মূলত রাজনীতিবিদরা ডিলারশিপ নিয়েছে। এখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় অনেকেই পণ্য উত্তোলনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আবার কেউ কেউ আড়ালে থেকে ব্যবসায়ীদের দিয়ে পণ্য উত্তোলন করছে।
টিসিবি সূত্র জানায়, ডিলার হিসেবে নিয়োগ পেতে আগ্রহীরা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করলে তা যাচাই-পূর্বক চ‚ড়ান্তভাবে ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়। আবেদনকারীকে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী হতে হবে। আবেদনকারীর দোকানে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ মেট্রিক টন পণ্য সামগ্রী গুদামজাত করার মত জায়গা থাকতে হবে। দোকান ভাড়ার দলিল ও মালিকানা দাখিলা কপি থাকতে হবে। যাবতীয় সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে জেলা প্রশাসকের মতামতের ভিত্তিতে ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। মূলত বিভিন্ন এমপির সুপারিশের ভিত্তিতেই উপজেলায় টিসিবি ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়।
মুদি দোকানের নামে লাইসেন্স দেখিয়ে টিসিবির পণ্যের ডিলারশিপ নেয়া দক্ষিণ জেলার বাসিন্দা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘কিছু টাকা আয়ের জন্য এমপির সহায়তায় ডিলারশিপ নিয়েছিলাম। ব্যবসা করতে গিয়ে লাভের অর্ধেক দোকানদারকে দিতে হতো। প্রশাসনের অনেক জটিলতা থাকায় এই ব্যবসায় তেমন লাভ নেই। যারা পণ্য বিতরণ না করে বিক্রি করে দেয় তারা কিছুটা লাভ করে। দেশের এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা করা কঠিন হবে। তাই ডিলারশিপ বাতিলের আবেদন করবো। যদিও এ মাসে পণ্য উত্তোলন করেছি।’