নিজস্ব প্রতিবেদক
চকবাজার এলাকার ঘড়ি মেরামত দোকানদার বাদল চক্রবর্তী। দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ তার পাঁচ জনের সংসার। গতকাল জামালখান টিসিবি পণ্যের ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের সামনে দুপুর বারোটায় লাইনে দাঁড়িয়ে আড়াইটায় পেয়েছেন পণ্য।
তিনি জানান, দ্রব্যমূল্যের বাড়তি হওয়ার কারণে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। বাজারমূল্যের অর্ধেক দামে টিসিবি পণ্য বিক্রি করে। তাই সময় ও কষ্ট হলেও এখান থেকে পণ্য কিনছি।
শুধু বাদল চক্রবর্তী নন। রিকশা চালক, দিনমজুর, ভাসমান ফলবিক্রেতা, গৃহিণীসহ অনেকে টিসিবি’র ভর্তুকিমূল্যের পণ্য কিনতে এসেছেন। কযেক ঘণ্টা অপেক্ষার পর পণ্য কিনতে পারছেন। অনেকে না পেয়ে খালি হাতেও ফিরেছেন। গতকাল জামালখান মোড়ে টিসিবি পণ্যের ট্রাকের সামনে ভিড় লক্ষ্য করা যায়। পুরুষের তুলনায় নারীর ভিড় বেশি। যুবতী থেকে বয়ঃবৃদ্ধ নারী এবং একই পরিবারের একাধিক সদস্যের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ নিন্মআয়ের মানুষ। এসময় পণ্য না পেয়ে প্রায় ৫০ জনকে ফিরে যেতে দেখা যায়।
স্ট্রেচারে ভর করে পণ্যে কিনতে আসেন ৬৫ বছর বয়সী ওমর আলী। ছয় মাস আগে তার পা ভাঙে। আগে দিনমজুরের কাজ করলেও এখন কিছুই করতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘মেয়ের বাসায় থাকি। মেয়ের জামাই দারোয়ানের চাকরি করে। বেতন কম, অভাব অনটনের সংসার। খবর পেয়ে ভর্তুকিমূল্যে পণ্য কিনতে এসেছি। কিছু টাকা সাশ্রয় হয়েছে।’
জামালখানে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করা মেসার্স সবুর এন্ড ব্রাদার্সের মালিক এম এ সবুর বলেন, ‘সকাল থেকে ৭শ থেকে ৮শ লাইন ধরে। এদের মধ্যে বরাদ্দকৃত পণ্যে সাড়ে ৩শ জনকে দেওয়া হয়। অনেকে পণ্যে পান না। এখানে একটা সংঘবদ্ধ গ্রহপ কাজ করে। এরা এক জায়গা থেকে নিয়ে আবার অন্য জায়গা থেকে নেয়। এদের কারণে যাদের প্রকৃত পাওয়ার কথা তারা বঞ্চিত হয়।’
গত ২৪ অক্টোবর থেকে টিসিবি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যের পণ্য বিক্রি শুরু হয়। এতে একজন ক্রেতা ৪৭০ টাকা দিয়ে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি মসুর ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল নিতে পারেন। প্রতিটি পয়েন্টে সপ্তাহে দুদিন ট্রাকে করে পণ্য দেওয়া হয়। একটি পয়েন্টে বরি ও বুধবার, আরেক পয়েন্টে সোম ও বৃহস্পতিবার এবং আরেক পয়েন্টে মঙ্গল ও শনিবার পণ্য বিক্রি করা হয়।
টিসিবি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নগরীর ২০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে সাত হাজার ভোক্তার কাছে চাল, ডাল ও তেল বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতিদিন একটি পয়েন্টে সাড়ে ৩শ জন করে নগরীতে ৭ হাজার জনের কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে প্রতি মাসে কার্ডের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ৫ লাখ ৩৫ হাজার ভোক্তার কাছে এসব পণ্য বিক্রি করা হয়।
টিসিবি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, শুক্রবার ব্যতিত সপ্তাহে ছয়দিন নগরীর ২০টি পয়েন্ট থেকে যে কেউ পণ্যে কিনতে পারবেন। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারীদের পাশাপাশি এখন থেকে যাদের কার্ড নেই তারাও পণ্য পাবেন। প্রতিদিন নগরীতে ৭ হাজার জনের মাঝে এ পণ্য বিক্রি করা হয়। এ ট্রাকসেল কার্যক্রম চলমান থাকবে।