এম. কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি
চলছে গ্রীষ্মের খরতাপ। তবে প্রকৃতির তীব্র উত্তাপও থামিয়ে রাখতে পারেনি পর্যটকদের উচ্ছ্বাস। টানা ৩ দিনের সরকারি ছুটিতে পাহাড়, লেক আর মেঘ-পাহাড়ের অপার সৌন্দর্যের টানে হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের নানা প্রান্ত ও দূর-দূরান্ত থেকে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। কেউ এসেছেন কাপ্তাই হ্রদের শান্ত জলরাশির স্নিগ্ধতা খুঁজতে, কেউবা সাজেকের মেঘে মোড়ানো পাহাড়ি পথে হারিয়ে যেতে, কেউবা এসেছেন লেক-পাহাড়ের সংমিশ্রণ দেখতে।
পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে জেলার প্রধান পর্যটন স্পট ঝুলন্ত সেতু, পুলিশ পলওয়েল পার্ক, কাপ্তাই লেক, সুবলং ঝরনা, কাপ্তাই নেভি ক্যাম্পসহ জনপ্রিয় সব স্পট। গ্রীষ্মের খরতাপ উপেক্ষা করেই কেউ এসেছেন বোট ভ্রমণে, কেউবা পাহাড়ি পথে ট্রেকিং করতে। শহরের হোটেল, মোটেল ও কটেজগুলোতে ৮০ শতাংশের বেশি ব্রæম আগে থেকেই বুকিং হয়ে গেছে। সাজেকেও অন্য সময়ের তুলনায় বেড়েছে বুকিং এর পরিমান।
গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার সিম্বল অব রাঙামাটি খ্যাত ঝুলন্ত সেতু সরেজমিনে পরিদর্শন করে পর্যটকদের উপচে পাড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। ২ দিনে এই সেতুতে অন্তত ৬ হাজারের অধিক পর্যটক ভ্রমণ করেন। রাঙামাটি শহরে গত ২ দিনে প্রায় ৬ হাজার পর্যটক অবস্থান নেন। সাজেক ভ্যালিতেও পর্যটকের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪ হাজার।
পর্যটকরা বলছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পাহাড়ি শান্ত পরিবেশ তাদের বারবার টেনে আনে এই অঞ্চলে। গ্রীষ্মেও রাঙামাটির সৌন্দর্য যেন অন্যরকম। পাহাড়, জল, বাতাস ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন- সব মিলিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
চট্টগ্রাম থেকে আসা আঞ্চলিক গানের সংগীত শিল্পী শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের ছেলে প্রেমসুন্দর বৈষ্ণব বলেন, পাহাড়ে আসি কারণ পাহাড় অনেক ভালো লাগে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের সব নাগরিকদেরই পাহাড় অনেক ভালো লাগে; তাই আমরা সময় পেলেই পাহাড়ে ছুটে আসি। অন্তত বছরে ১ বার হলেও আমি রাঙামাটিতে আসি। এখানে একদিকে পাহাড় অন্যদিকে কাপ্তাই হ্রদ আর এর মাঝে আঁকা-বাঁকা, উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য যে কাউকেই মুগ্ধতায় আকৃষ্ট করে। তাই আমরা বরাবরই এখানে ছুঁটে আসি।
কক্সবাজার থেকে আসা পূজা বৈষ্ণব বলেন, আমি সাগর পাড়ের মেয়ে। কিন্তু আমি পাহাড় অনেক বেশী ভালোবাসি। আর পাহাড় ও সাগরের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। সাগর ও পাহাড় একসাথে থাকলে দেখতে অনেক বেশী ভালো লাগে। কক্সবাজারে এটা উপভোগ করা যায় না। কিন্তু রাঙামাটিতে এটা উপভোগ করা যায়। প্রতিটি পাহাড়ের বাঁকে-বাঁকে কাপ্তাই লেক। এজন্য রাঙামাটি অনেক বেশী ভালো লাগে। এখন গরমের দিন তাও এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর ও শান্ত।
মো. শাহারুল ইসলাম বলেন, পাহাড় এবং লেক দুইটার সংমিশ্রণ একসাথে করা হয়েছে। আমরা যখন বাইরের দেশগুলোতে ঘুরতে যাই সুইজারল্যান্ড বা অন্যান্য দেশগুলোতে, ওখানে আমরা যে দৃশ্যগুলো দেখি, ঠিক সেরকম লোকেশনগুলো আমাদের এখানে আছে। বাংলাদেশের অর্ধেক সৌন্দর্য রয়েছে পার্বত্য অঞ্চল রাঙামাটির এই এলাকাটিতে। এরমধ্যে রয়েছে পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক, বিশেষ করে ঝুলন্ত ব্রিজ, অনেক পুরাতন একটি ঐতিহ্য আমাদের। এসব জায়গায় ঘুরতে বাহির থেকে অনেক লোকজন এখানে আসেন। অন্যান্য অঞ্চলে পাহাড় পাওয়া গেলেও একসাথে লেক পাওয়াটা দুষ্কর, সেক্ষেত্রে মনে হয় বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গা ঘুরার চেয়ে সবার রাঙামাটিতে ঘুরতে শ্রেয়। ডিপ্রেশনও কাটিয়ে উঠবেন। এতে করে তারা বাংলাদেশের প্রকৃতির সৌন্দর্যটা উপভোগ করতে পারবেন।