ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী করোনা ভাইরাসের টিকা পেতে সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বলেছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপন। মাত্র দুই সপ্তাহের টিকার মজুদ থাকতে সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনালের হাসপাতালে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন তিনি।
বেক্সিমকো ফার্মার এমডি নাজমুল বলেন, ‘সেরাম টিকা না দিলে দ্বিতীয় ডোজের সংকট হবে। এ বিষয়টি সরকারকে জোরালোভাবে বলা উচিত। কারণ দেড় কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য সরকার তাদের অগ্রিম টাকা দিয়েছে।’
সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনা ভাইরাসের টিকা কিনতে গত বছরের নভেম্বরে চুক্তি করে বাংলাদেশ। বেক্সিমকো ফার্মা ওই টিকা সংরক্ষণ ও সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ ভারতে ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যে বিপুল চাহিদা তৈরি হওয়ায় আর বিশ্বজুড়ে টিকার সঙ্কটের কারণে ফেব্রূয়ারির চালানে বাংলাদেশ ২০ লাখ ডোজ হাতে পায়। এরপর আর কেনা টিকা আসেনি।
গণটিকাদান শুরু পর ২২ এপ্রিল শেষে বাংলাদেশের কাছে মজুদ আছে টিকার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৯ ডোজ, যা দিয়ে মে’র প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে বলে এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছেন। নতুন সরবরাহ ছাড়া টিকা দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বলা খুব কঠিন। আমাদের জন্য (সেরাম) পুরো ৫০ লাখ রেডি করে রেখে দিয়েছে কোনো সমস্যা নেই। ওদের (ভারতের) এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষা করছে। সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আমাদের লিখিত জানিয়েছে, তাদের সরকার আটকে রেখেছে। তাই আমি সরকারের কাছে আবেদন করছি। এরপর আমাদের চুপ করে থাকার কোনো কারণ নেই। আমার কথা হচ্ছে যে টাকা সরকার অগ্রিম দিয়েছে, সেটা আটকাতে কোনোভাবেই তারা পারে না।’
টিকা না দিলে কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে বেক্সিমকো ফার্মার এমডি বলেন, ‘আমাদের এখানে কিছু করার নেই। সরকার আগে টাকা দিয়ে বুক করার কথা, সরকার সেটা করেছে। বেক্সিমকোর দায়িত্ব, সেটা আসার পরে এখানে পরিবহন, স্টোরেজ ও বিতরণ- আমরা সেটা করছি’।
এবিষয়ে ‘আইনি পদক্ষেপে’র তেমন ‘গুরুত্ব’ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ হলো- আমরা এতদিন ধরে বলে আসছি, আমরা বিশ্বাস করি ও জানি ভারত বাংলাদেশের বন্ধু- এটা দেখার একটা সময় হয়েছে, এটা এখন দেখতে হবে, এত মিষ্টি মিষ্টি কথা শোনার দরকার নেই। আমরা ওদের কাছ থেকে কোনো দয়া চাচ্ছি না, আমার ন্যায্য পাওনা আমাদের ভ্যাকসিন, সেটাই চাচ্ছি’।
আরেক প্রশ্নের জবাবে নাজমুল বলেন, ‘টিকা এনে দিয়ে সরকারকে সহায়তা করা ছিল বেক্সিমকোর পরিকল্পনা। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি দেখছি তাতে করে না বানানো ছাড়া কোনো পথ নেই। এমন কোনো ওষুধ নেই যেটা বাংলাদেশ বানাতে পারে না’। তবে চলতি বছরের মধ্যে টিকা তৈরির কোনো পরিকল্পনা বেক্সিমকোর নেই বলে জানান তিনি।
জুনের পর দেশে টিকার সঙ্কট থাকবে না বলে আশাপ্রকাশ করে নাজমুল বলেন, ‘আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রচুর ভ্যাকসিন চলে আসবে। জুন পর্যন্ত সংকট থাকবে, জুনের পরে কোনো সংকট থাকবে না’। খবর বিডিনিউজের