নিজস্ব প্রতিবেদক
বোয়ালখালীর কধুরখীলে গাছে ঝুলছে ‘টকের রাজা’ মাইলাম ফল। সেখানকার স্থানীয়রা টক জাতীয় এই ফলকে বলে বাইল্লাম। চট্টগ্রামের অন্য কোথাও এই জাতের ফল দেখা না গেলেও বোয়ালখালীর কধুরখীলসহ কয়েকটি ইউনিয়নে এই ফলের প্রচুর গাছ আছে। মাইলামের প্রতিটি গাছই এখন ফলভর্তি। গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাইলাম। মাইলাম পেকে হলদে রঙ ধারণ করেছে সবুজ গাছ। মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে পাইকাররা গাছ থেকে মাইলাম সংগ্রহ শুরু করেছে। প্রতি বছর নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে গাছে মাইলামের মুকুল আসে। মার্চ-এপ্রিল মাসে মাইলাম ফল পাকে।
চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. ওমর ফারুক পূর্বদেশকে বলেন, ‘মাইলাম আমের একটি প্রজাতি যা আগাম পাকে। এই ফল ছোট আকারের এবং খুবই টক। পাহাড়ী এলাকা বিশেষ করে বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়িতে উৎপাদন হয় বেশি। এটি ওয়াইল্ড প্রকারের আম। এই প্রচুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ।’
জানা যায়, অঞ্চলভেদে এই ফলকে নানা নামে ডাকা হয়। মালি আম, মাইলাম, মাইজ্জাম, মুহুঞ্জি কিংবা বাইল্লাম হিসেবে চেনা যায়। তবে মাইলাম নামেই এ ফল সমাদৃত। এ ফল ব্যথানাশক ওষুধ বানাতে ব্যবহৃত হয়। কুকুর ও বিড়ালের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে গ্রামে এই ফলের গুরুত্ব আছে। কুকুর ও বিড়ালের কামড়ের পর মাইলামের শুকনা আচার খেলে সুস্থ হওয়ার প্রচার আছে। ঢাকার রমনা পার্কেও মাইলাম গাছ আছে। মাইলাম গাছ অনেক বড় হলেও এর পাতা, ফুল ও ফল সাধারণ আমের চেয়ে ছোট হয়। মাইলাম কাঁচা থাকলে সবুজ পাতার সাথে মিশে থাকে। পাকলে সবুজ গাছ ভরে যায় হলদে ফলে।
সরেজমিনে কধুরখীলে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়ির বাগিচায় মাইলাম গাছ আছে। গাছে গাছে ঝুলতে থাকা মাইলাম সংগ্রহ করছে পাইকাররা। সংগ্রহের সময় পড়ে নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় অনেক যতেœ মাইলাম সংগ্রহ করা হয়। গাছ থেকে সংগৃহিত মাইলামগুলো গাছতলাতেই প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। মাইলামের দাম বেশ চড়া। মাইলামে ভরপুর থাকা প্রতিটি গাছের ফল বিক্রি হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। এসব মাইলাম চট্টগ্রামের চেয়ে নোয়াখালী ও লক্ষীপুরে বেশি চাহিদা আছে বলে জানায় পাইকাররা।
কধুরখীল থেকে মাইলাম সংগ্রহ করা পাইকারী ব্যবসায়ী জাহেদুল আলম বলেন, ‘এই ফল খুব টক। চট্টগ্রামের মানুষ মাইলাম খায় কম। এগুলো নোয়াখালীতে পাঠানো হয়। মাঝেমধ্যে চট্টগ্রামে পাওয়া গেলেও দাম বেশি। একটি মাইলাম খুচরা বিক্রি হয় ৮-১০ টাকা।’
কধুরখীল ইউনিয়নের ছোট মাস্টার বাড়িতে কমপক্ষে ১০টি মাইলাম গাছ আছে। বাড়ির মালিক শাপলা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এই ফলকে বাইল্লাম হিসেবেই চিনি। আমার জন্মের পর থেকেই বাইল্লাম গাছ দেখছি। এই গাছ কধুরখীল ছাড়া চট্টগ্রামের কোথাও দেখি নাই। কধুরখীলের প্রায় বাড়িতে বাইল্লাম গাছ আছে। আমার বাড়ির বাগিচায় থাকায় গাছগুলো এবার ৪০ হাজার টাকায় লাগিয়ত করেছি। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ফল সংগ্রহ করছে পাইকাররা। এই ফল খুব বেশি টক বলে এটিকে ‘টকের রাজা’ বলা হয়।’