নিজস্ব প্রতিবেদক
ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নগরীর জামালখানে স্লোগান দিয়ে আকস্মিক ঝটিকা মিছিলের প্রতিবাদ ও মিছিলকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দামপাড়ায় সিএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এ সময় শিক্ষার্থীরা সিএমপি সদর দপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে মিছিলকারী সবাইকে গ্রেপ্তারে চব্বিশ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হলে সিএমপি কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হবে।
আগের দিন রাতে ঝটিকা মিছিলের প্রতিবাদে গতকাল শনিবার বিকেল তিনটার দিকে প্রথমে নগরীর জামালখানে প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা দামপাড়ায় সিএমপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। পুলিশ জানিয়েছে, জামালখানে ঝটিকা মিছিলকারীরা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত পৌনে একটার দিকে নগরীর জামালখান এলাকায় আনুমানিক ২০-৩০ জন যুবক আকস্মিকভাবে মিছিল বের করেন। তারা ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন নানা
স্লোগান দেন। রাতেই মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি আপলোড করা হয়।
এ বিষয়ে সিএমপির কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ভিডিও ফুটেজ ও ছবি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মিছিলকারীরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তারা সেটা প্রতিহত করার নামে হামলা-আক্রমণ, গোলাগুলি করেছিল। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত মামলাও আছে। মিছিলের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। এর মধ্যে তিনজন সরাসরি মিছিলে ছিল। তাদের আগের মামলায় এবং অন্যজনকে নিয়মিত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
জামালখান প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে নগরীর দামপাড়ায় সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, যারা চট্টলার মাটিতে খুনি হাসিনার নামে স্লোগান দিয়েছে, তারাই ছাত্র-জনতা গণহত্যাকারী। রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। এর মধ্যেই তারা চট্টগ্রামে মিছিল করার সাহস পায় কিভাবে? তারা খুনি, স্বৈরাচার হাসিনার নামে স্লোগান দেওয়ার সাহস পায় কিভাবে? এই গণহত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। না পারলে সিএমপি কমিশনারকে পদত্যাগ করে চলে যেতে হবে। প্রয়োজনে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেবো।
ঘেরাও কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, তারা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা জানতে চাই, গণহত্যার সঙ্গে জড়িতরা এখনো কীভাবে ঘোরাফেরা করে? সেই খুনিরা, যারা পরিকল্পিতভাবে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছে, গুলি করেছে, তারা এখনো গ্রেপ্তার হলো না কেন? যারা গত রাতে এই চট্টগ্রামের মাটিতে খুনি হাসিনার নামে ¯েøাগান দিয়েছে, তাদের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যদি মনে করেন, ছাত্র-জনতা ঘুমিয়ে গেছে তাহলে ভুল করবেন। আমরা রাজপথ থেকে এসেছি, বানের জলে ভেসে আসিনি। খুনি হাসিনার নামে যারা স্লোগান দিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করুন। নয়তো কোতোয়ালি, পাঁচলাইশ ও চকবাজার থানার ওসিকে চলে যেতে হবে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে না পারলে সিএমপি কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই বাংলার জমিনে আমরা খুনি হাসিনার নামে আর কোনও দিন স্লোগান শুনতে চাই না। আমরা রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের খুনিদের গ্রেপ্তার করুন। না পারলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেবো।