জয়নালের কোটি টাকার বাড়ি জব্দ করবে দুদক

88

রোহিঙ্গাদের ভোটার করার অপরাধে গ্রেপ্তার হওয়া নির্বাচন কমিশনের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিনের নির্মাণাধীন বাড়িটি জব্দের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল শুক্রবার বিকালে বাঁশখালী পৌরসভার আস্করিয়া পাড়ায় জয়নালের বাড়িটি পরিমাপের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেন ঢাকা থেকে আসা দুদকের একটি টিম। প্রায় আড়াই ঘণ্টা এ টিমের সদস্যরা জয়নালের বাড়িতে অবস্থান করেন।
দুদক ঢাকা কার্যালয়ের পরিচালক জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অফিস সহায়ক রোহিঙ্গাদের ভোটার করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। তার অঢেল সম্পত্তির উৎসের খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে অবৈধ টাকায় নির্মিতব্য তার বাড়িটির মূল্য পরিমাণ বের করতে আয়তন পরিমাপ করা হয়েছে। একই সাথে বাড়িটি জব্দের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এছাড়াও জয়নালের পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’
জয়নালের বাবা আবদুল মোনাফ বলেন, জয়নাল চাকরি করলেও তার এক ভাই বিদেশে থাকতো। জয়নাল মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়িতে আসতো। আগে জয়নালের সাথে আমাদের তেমন যোগাযোগ হতো না। বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরুর পর বাড়িতে আসা-যাওয়া বাড়িয়ে দেয়।
স্থানীয়রা বলেন, পারিবারিকভাবে তেমন স্বচ্ছল ছিলো না জয়নালের পরিবার। ২০০৪ সালে পিয়ন পদে চাকরিতে যোগদান করা জয়নালের বেতন তেমন বেশি ছিল না। তবুও কয়েক বছরে প্রচুর বিত্তশালী হয়েছেন জয়নাল। সাততলা বাড়িটি দেখলেই যে কেউ মনে করেন এটির মালিক কোন ধনাঢ্য ব্যক্তি। প্রকৃত পক্ষে বাড়িটি জয়নালের। সাততলার ভিত্তি দেয়া এই বাড়িটি ছাড়াও মাস ছয়েক আগে তিন গন্ডার একটি প্লট কিনেছেন জয়নাল। একসময় মাছধরা ট্রলারের মাঝি ছিল তার বাবা। ছেলেদের হঠাৎ এমন উত্থানে এলাকাবাসীও বিস্মিত। গ্রেপ্তার হওয়ার পর সবকিছু স্পষ্ট হলে তার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন বাড়িটি তার ভাই জসীম উদ্দিনের টাকায় নির্মাণ হচ্ছে।
স্থানীয় হারুনুর রশিদ ও আবুল বশর নামে দুই ব্যক্তি জানান, জয়নালের এক ভাই জসীম উদ্দিন বিদেশে থাকেন। বাড়ির কাজ শুরু হলে আমরা মনে করেছিলাম তার ভাই ঘরটি করছে। পরে জানতে পারি রোহিঙ্গাদের ভোটার করে প্রচুর টাকা আয় করেছেন জয়নাল। এ টাকা দিয়েই কোটি টাকা খরচ করে বাড়িটি করা হচ্ছে। শুনেছি, জয়নালের গাড়ি আছে। বড়ুয়া পাড়া রোডেও নাকি জমি কিনেছে। শুধু জয়নাল নয়, তার অনেক আত্মীয় নির্বাচন অফিসে চাকরি করেন। তারা সবাই অনেক টাকার মালিক।
এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে এ চক্রকে ধরতে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানে নির্বাচন কার্যালয়ের ল্যাপটপ ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার অপরাধে নির্বাচন কমিশনের বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে জয়নালকে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে জয়নালকে বরখাস্ত করা হয়।