সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী
অধঃপতনের যুগে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা নিয়ে যে সকল মনীষী পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন, পার্থিব লোভ-লালসা ও ক্ষমতার মোহ যাদের ন্যায় ও সত্যের আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র পদঙ্খলন ঘটাতে পারেনি, যাঁরা অন্যায় ও অসত্যের নিকট কোনো দিন মাথা নত করেননি, যাঁরা ইসলাম ও মানুষের কল্যাণে সারাটা জীবন পরিশ্রম করে গিয়েছেন, যাঁরা সত্যকে আঁকড়ে থাকার কারণে যালেম কর্তৃক অত্যাচারিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত; এমনকি কারাগারে নির্মমভাবে প্রহৃত হয়েছেন, ইমাম আযম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁদের অন্যতম।
জন্ম ও শিক্ষা: ইমাম আবু হানিফা ৮০ হিজরি মোতাবেক ৭০২ খ্রিষ্টাব্দে কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম হলো নু’মান। পিতার নাম সাবিত এবং পিতামহের নাম জওতা। তাঁর বাল্যকালের ডাক নাম ছিল আবু হানিফা। তিনি ‘ইমাম আযম’ নামে সর্বাধিক পরিচিত। তাঁর পূর্বপুরুষগণ ইরানের অধিবাসী ছিলেন। পিতামহ জওতা জন্মভূমি ত্যাগ করে কুফায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি ১৪/১৫ বছর বয়সে নিজস্ব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গমণকালে তৎকালীন হাদিসের বিখ্যাত ইমাম হযরত শা’বী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “হে বালক, তুমি কি কোথাও লেখাপড়া শিখতে যাচ্ছ? উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি তো এখন কোথাও লেখাপড়া করি না।’ ইমাম শা’বী বললেন, ‘আমি তোমার মধ্যে প্রতিভার চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি। ভালো আলেমের নিকট তোমার লেখাপড়া শেখা উচিত।” ইমাম আবু হানিফা বলেন, ইমাম শা’বীর সেই আন্তরিকতাপূর্ণ উপদেশবাণীগুলো আমার অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করল এবং এরপর থেকেই আমি বিপনীকেন্দ্রগুলোতে আসা-যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাকেন্দ্রেও যাতায়াত শুরু করলাম। (আবু যাহরা: মুয়াফেক)
ইমাম শা’বী’র উপদেশ ও অনুপ্রেরণায় তিনি ইমাম হাম্মাদ, ইমাম আতা ইবনে রবিয়া ও ইমাম জাফর সাদিক রাহমতুল্লাহি আলাইহিমসহ তৎকালীন বিখ্যাত আলেমগণের নিকট শিক্ষা লাভ করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কোরআন, হাদিস, ফিকাহ, ইলমে কালাম, আদব প্রভৃতি বিষয়ে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। জ্ঞান লাভের জন্য তিনি মক্কা, মদিনা, বসরা এবং কুফার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত আলেমগণের নিকট ছুটে যান এবং হাদিসের অমূল্য রতœ সংগ্রহ করে স্বীয় জ্ঞানভান্ডার পূর্ণ করেন। দীর্ঘ ছয়টি বছর মক্কা- মাদীনা অবস্থান করে সেখানকার অধিকাংশ শাইখদের নিকট থেকে ইলম হাসিল করেন। এছাড়া তিনি ৫৫ বার পবিত্র হাজ্বব্রত পালন করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় (উক‚দুল জামান, পৃ- ২২০)।
উল্লেখ্য যে, তিনি চার হাজার শাইখ থেকে হাদীস সংগ্রহ করেছেন বলে বিভিন্ন লেখক মতামত পেশ করেছেন (আস সুন্নাহ, পৃ- ৪১৩, উক‚দুল জামান, পৃ- ৬৩, খইরতুল হিসান, পৃ- ২৩।)
তিনি ছিলেন একজন তাবেয়ী: তিনি ১০২ হিজরিতে মদিনায় সাহাবি হযরত সোলাইমান ও হযরত সালেম ইবনে সুলাইমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমা’র দর্শন লাভ করেন। এছাড়াও তিনি আরও কয়েকজন সাহাবীর সাক্ষাত লাভ করেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন,
১) হযরত আনাস ইবনে মালেক (ওফাত ৯৩ হি:)। ২) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা (ওফাত ৮৭ হি:)। ৩) হযরত সাহল ইবনে সাআদ (ওফাত ৮৮ হি:)। ৪) হযরত আবু তোফায়ল (ওফাত ১১০ হি:)। ৫) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়দী (ওফাত ৯৯ হি:)। ৬) হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (ওফাত ৯৪ হি:)। ৭) হযরত ওয়াসেনা ইবনুল আসকা (ওফাত ৮৫ হি:) রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈন।
এ মর্মে হাদিস শাস্ত্রে ‘আমিরুল মুমেনীন’ নামে খ্যাত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ:) স্বরচিত কবিতার এক পংক্তিতে উল্লেখ করেছেন যে, ‘নোমান (আবু হানীফা) এর পক্ষে গর্ব করার মতো এতটুকুই যথেষ্ট যে, তিনি সরাসরি সাহাবীগণের নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন’। তবে তাঁর অধিকাংশ শিক্ষক ছিলেন তাবেয়ী। ফলে হাদিস সংগ্রহের ব্যাপারে তাঁকে মাত্র একটি মধ্যস্থতা অবলম্বন করতে হতো। এ কারণে তাঁর সংগৃহীত হাদিসসমূহ সম্পূর্ণ সহীহ বলে প্রমাণিত।
তাঁর শিক্ষাদান পদ্ধতিঃ ইমাম হাম্মাদের ইন্তেকালের পর তিনি চল্লিশ বছর বয়সে উস্তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে তাঁর শিক্ষাকেন্দ্রের পূর্ণদায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাকেন্দ্রে ক‚ফার সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি বিশিষ্ট জ্ঞানীগুণী; এমনকি তাঁর অনেক উস্তাদও শরীক হতেন। বিখ্যাত তাবেয়ী মাসআ’ব ইবনে কোদ্দাম, ইমাম আ’মাশ প্রমুখ নিজে আসতেন এবং অন্যদেরকেও দরসে যোগ দিতে উৎসাহিত করতেন। তাই তখনকার মুসলিম-বিশ্বের এমন কোন অঞ্চল ছিল না, যেখানকার শিক্ষার্থীগণ ইমাম আবু হানীফার দরসে সমবেত হতেন না। তাঁর অনুপম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বদৌলতে সে যুগে এমন কিছু মহান সমুজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের সৃষ্টি হয়েছিল, যাঁরা মুসলিম উম্মাহর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আকাশে জ্যোতিষ্ক হয়ে চির ভাস্বর হয়ে রয়েছেন। তাঁর সরাসরি সাগরেদগণের মধ্যে ২৮ জন বিভিন্ন সময়ে কাযী (বিচারক) এবং শতাধিক ব্যক্তি মুফতী-মুহাদ্দিসের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁদের মধ্যে ইমাম মুহাম্মদ, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম যুফার রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম অন্যতম। ইসালামের ইতিহাসে এক ব্যক্তির প্রচেষ্টায় এত বিপুল সংখ্যক প্রাজ্ঞ ব্যক্তির আবির্ভাব খুবই বিরল।
তাফসিরশাস্ত্রে তাঁর অসাধারণ পান্ডিত্য: তাফসিরশাস্ত্রে তাঁর অসাধারণ অভিজ্ঞতা ও পান্ডিত্য থাকা সত্তে¡ও ফিকাহশাস্ত্রেই তিনি সর্বাধিক খ্যাতি লাভ করেন। তিনি কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের ভিত্তিতে বিবিধ বিষয়ে ইসলামি আইনগুলোকে ব্যাপক ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করেছেন। বর্তমান বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মুসলমান হানাফি মাযহাবের অনুসারী। ফিকাহ শাস্ত্রে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও অবদানের জন্যই মুসলিম জাতি সত্যের সন্ধান অনায়াসে লাভ করতে পেরেছে।
হাদিসশাস্ত্রে তাঁর অসাধারণ পাÐিত্য: মুহাম্মাদ ইবন সামায়াহ বলেছেন, ‘আবু হানীফা তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোতে সত্তর হাজারের অধিক হাদীস বর্ননা করেছেন। আর ‘আল আছার’ গ্রন্থটি চল্লিশ হাজার হাদীস থেকে বাছাই করে লিখেছেন’ (আল জাওয়াহিরুল মযিয়াহ, খ- ২, পৃ- ৪৭৩)।
ইয়াহইয়া ইবন নাসর বলেন, “একদিন আমি ইমাম আবু হানীফার ঘরে প্রবেশ করি যা কিতাবে ভরপুর ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এগুলো কী? তিনি বললেন, এগুলো সব হাদীসের কিতাব, এর মধ্যে সামান্য কিছুই আমি বর্ননা করেছি যেগুলো ফলপ্রদ’ (আস সুন্নাহ, পৃ- ৪১৩, উক‚দু জাওয়াহিরিল মুনীফাহ, ১, ৩১)।
তাঁর শাগরিদগণ তাঁর বর্ণিত হাদীসগুলো সংগ্রহ করে বিভিন্ন কিতাব ও মুসনাদ এ সংকলন করেছেন যার সংখ্যা দশের উর্দ্ধে। তার মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ গ্রন্থগুলো হল: ইমাম আবু ইউসুফ রচিত ‘কিতাবুল আসার’, ইমাম মুহাম্মাদ রচিত ‘কিতাবুল আসার আল মারফুআহ’ ও ‘আল আসারুল মারফুআহ ওয়াল মাওকুফাহ’, ‘মুসনাদুল হাসান ইবনি যিয়াদ আল লুলুঈ’, ‘মুসনাদে হাম্মাদ ইবনি আবু হানীফা’ ইত্যাদি। হাফেয যাহাবী তাঁর কিতাবে ইমাম আবু হানিফাকে হাফেযুল হাদীসের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। (তাযকিরাতুল হুফফায, পৃ: ১৬০)
র্জহ ও তা’দিলের (সনদ পর্যালোচনা শাস্ত্র) অন্যতম ইমাম ইয়াহ্ইয়া ইবনে মুঈন (ওফাত- ২৩৩হিঃ) বলেন, ‘আবু হানীফা ছিলেন হাদীস শাস্ত্রের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি’- (তাহবীবুত্তাহজীব ৫/৬৩০) আলী ইবনে মাদানী (মৃতু- ২৩৪ হিঃ) তিনি আরও বলেন, আবু হানীফা হাদীস শাস্ত্রে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তাঁর মধ্যে কোন দোষক্রটি ছিল না। (জামঈ বয়ানিল ইল্ম ২/১০৮৩)
ফাতাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অনুসৃত নীতি: যে কোন সমস্যার সমাধান অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে তাঁর অনুসৃত নীতি ছিল, প্রথমে কুরআন ও হাদিস শরীফের শরণাপন্ন হওয়া। এরপর সাহাবায়ে কেরাম গৃহীত নীতির উপর গুরুত্ব দেওয়া। উপরোক্ত তিনটি উৎসের মধ্যে সরাসরি সমাধান পাওয়া না গেলে তিনটি উৎসের আলোকে বিচার-বুদ্ধির (কেয়াসের) প্রয়োগ করতেন। তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন হাদিস বা সাহাবীগণের অভিমতের সাথে যদি আমার কোন বক্তব্যকে সাংঘর্ষিক মনে হয়, তবে আমার বক্তব্য অবশ্য পরিত্যাজ্য হবে। হাদিস এবং আছারে সাহাবা দ্বারা যা প্রমাণিত সেটাই আমার মাযহাব।
ইবনে হাযম বলেন, ইমাম আবু হানীফার সকল ছাত্রই এ ব্যাপারে একমত যে, নিতান্ত দূর্বল সনদযুক্ত একখানা হাদিসও তাঁর নিকট কেয়াসের তুলনায় অনেক বেশী মূল্যবান দলিলরূপে বিবেচিত হতো। এ কারণেই পরবর্তী যুগে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যে সব কালজয়ী প্রতিভার জন্ম হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশ ইমাম আবু হানীফার মাযহাব অনুসরণ করেছেন।
সুতরাং যারা এ কথা বলতে চায় যে, হানাফী মাযহাব সহীহ হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বা ইমাম আবু হানীফা বহু ক্ষেত্রে হাদিসের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করেছেন, তাদের বক্তব্য যে নিতান্তই উদ্ভট তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। বরং হানাফী মাযহাব হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহর এমন এক যুক্তিগ্রাহ্য ও সুবিন্যস্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ; যা সর্বযুগের মানুষের নিকট সমভাবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে।
তাঁর তীক্ষ বুদ্ধি, ধী-শক্তি ও গভীর জ্ঞান: তিনি যেমন তীক্ষ বুদ্ধি ও ধী-শক্তি সম্পন্ন ছিলেন তেমনি ছিলেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী। প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত আ’মাশ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ইমাম আযমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সত্যিই তোমরা ফকীহরা হলে ডাক্তারতুল্য, আর আমরা হলাম ঔষধ কিক্রেতা।’ (আল জাওয়াহের আল মুদিয়াহ, খ- ২, পৃ- ৪৮৪)।
ইমাম বোখারীর অন্যতম উস্তাদ (যাঁর সনদে ইমাম বুখারী অধিকাংশ ‘সুলাসিয়্যা-ত হাদীস’ বর্ণনা করেছেন।) এবং ইমাম আবু হানীফার ছাত্র মক্কী বিন ইব্রাহীম (ওফাত- ২১৫ হিঃ) বলেন, ‘আবু হানীফা তাঁর সময়কালের শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন’ (মানাক্বেবে ইমাম আযম রহ. ১/৯৫)
হাফিয মিযযী বলেন, মক্কী বিন ইব্রাহীম ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি তাঁর সময়কালের সবচেয়ে বড় আলিম ছিলেন’ (তাহ্যীবুত তাহযীব-এর টিকা- ১০ম খন্ড, ৪৫২পৃ.)
ইমাম আবু দাউদ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আবু হানীফা ছিলেন একজন শেষ্ঠ ইমাম।’ (তাহজীব ১/৪৪৫)। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হাফিয ইয়াহ্ইয়া বিন হারুন (ওফাত- ২০৬ হিঃ) বলেন, ‘আবু হানীফা ছিলেন সমকালীন শ্রেষ্ঠতম জ্ঞানী ও সত্যবাদী’ (আহবারে আবু হানীফা ৩৬)
আল্লামা হাফেয ইবন হাজার আসক্বালানী বলেন, “ইমাম আবু হানীফার ওফাতে ফিক্বাহ ও হাদীস শাস্ত্রের সুপ্রসিদ্ধ ইমাম, ইবনে জরীহ গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আহ! ইলমের কি এক অফুরন্ত খনি আজ আমাদের হাতছাড়া হলো’। (তাহযীবুত্তাহযীব খন্ড ১, পৃ: ৪৫০)। ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ফিকাহশাস্ত্রের সকল মানুষ আবু হানিফার পরিবারভুক্ত। (আছারুল ফিকহিল ইসলামী, পৃ. ২২৩)। বিখ্যাত মুহাদ্দিস আবদুল্লাহ বিন মুবারক বলেন, ‘কোন ব্যক্তি অনুসরনীয় হওয়ার দিক থেকে ইমাম আযম আবু হানিফার চেয়ে অধিক যোগ্য নয়। কেননা আবু হানিফা ছিলেন ইমাম, খোদাভীরু, মুত্তাকী ও আলেম । তী² মেধা ও বুঝ-বুদ্ধি দিয়ে ইলমকে এমনভাবে বিশ্লেষন করেছেন যে ইতিপূর্বে কেউ তা করতে পারে নি।’ (খাইরাতুল হিসান, লেখক: ইবনে হাজার হায়ছামী শাফেয়ী)
তাঁর ইন্তিকাল: খলীফা মনসুরের সময় ইমাম আবু হানিফাকে প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহনের জন্য আহবান জানানো হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে ত্রিশটি বেত্রাঘাত করা হয় এবং কারারুদ্ধ ও নজরবন্দী করে রাখা হয়। সেখানেই তিনি সিজদারত অবস্থায়ই ১৫০ হিজরীর জুমাদা আল উলা বা রজব অথবা শাবন মাসে এ নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তাঁর জানাযায় পঞ্চাশ হাজারের অধিক লোক অংশগ্রহণ করেন। তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী খায়যুরান কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, খতীব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ