জেরুজালেমে বিক্ষোভের মধ্যে কিশোরের মৃত্যু

2

ইসরায়েলের জেরুজালেমে সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদানের বিরুদ্ধে কট্টর-রক্ষণশীল ইহুদিদের এক সমাবেশের মধ্যে এক কিশোরের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার শহরের প্রধান প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া এ সমাবেশে আনুমানিক দুই লাখ মানুষ অংশ নেন বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অংশগ্রহণকারীদের সিংহভাগই ছিলেন পুরুষ। সমাবেশে অংশ নেওয়া অনেকে যে বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদে, গ্যাস স্টেশনে ও ক্রেনের ওপর উঠেছিলেন তা একাধিক ছবিতে দেখা গেছে। খবর বিডিনিউজ’র
ইসরায়েলি এক অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা জানিয়েছে, উপর থেকে নিচে পড়ে ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলেছে, তারা এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ওই কিশোর নির্মাণাধীন একটি উঁচু ভবন থেকে নিচে পড়ে মারা গেছে, বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো।
ইসরায়েলে সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদান এবং এ থেকে ছাড় পাওয়াদের নিয়ে ইসরায়েলের সমাজে বিতর্ক বিভাজন দীর্ঘদিনের। এই বিভাজন সম্প্রতি আরও প্রকট হয়েছে এবং তা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য রাজনৈতিক চাপও বাড়িয়েছে।
কট্টর-রক্ষণশীল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বহু বছর ধরেই বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে যোগদানের নিয়মে ছাড় পেয়ে আসছে। কিন্তু মূলধারার শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ছাড় নেই, যাকে অন্যায্য মনে করেন অনেক ইসরায়েলি। গত দুই বছরে একাধিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ইসরায়েলের সেনাদের বিপুল প্রাণহানির পর এই ক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে।
সামরিক বাহিনীতে যোগ নিয়ে নতুন এক বিল এই বিতর্ককে তুঙ্গে তুলে দিয়েছে, এটি এমনকী নেতানিয়াহুর জোট সরকারের জন্যও নতুন সঙ্কটের জন্ম দিয়েছে। আর এই বিতর্কের কেন্দ্রেই রয়েছে নতুন নিয়োগ বিল, যা নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের জন্য এখন বড় রাজনৈতিক সংকটে পরিণত হয়েছে।
কট্টর-রক্ষণশীল নেতারা বলছেন, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়নে পূর্ণকালীন নিবেদনকে তারা পবিত্র ও অমোঘ বলে মনে করেন; সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হলে এই তরুণরা ধর্মীয় জীবন থেকে সরে যেতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা।
“এখন যারা সেনাবাহিনীতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদের সামরিক কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা খুব একটা খারাপ নয়। কিন্তু আমরা তো ইহুদি দেশ, ইহুদি দেশে ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে আপনি লড়াই করতে পারেন না। এটা কাজে দেবে না,” বলেন বিক্ষোভকারী শমুয়েল অরবাখ।
গত বছর ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদানে ছাড়ের বিধান বাতিলের নির্দেশ দেয়। এরপর থেকে সংসদে নতুন নিয়োগ আইন নিয়ে টানাপড়েন চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তাবই কট্টর-রক্ষণশীল স¤প্রদায় ও চাপে থাকা সেনাবাহিনী উভয়ের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়নি।
এ বিল নিয়ে জুলাইয়ে নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের দুই জোটসঙ্গী শাস ও ইউনাইটেড তোরাহ জুডাইজম সরকার থেকে সরে দাঁড়ালে ক্ষমতাসীন জোট আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
এখন জোটে থাকা ডানপন্থিদের একাংশ আবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় হামাসের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতিরও বিপক্ষে।
সামনের বছরের নির্বাচন নিয়ে এমনিতেই নানামুখী চাপে আছেন নেতানিয়াহু। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সাবেক-বর্তমান জোট সঙ্গীদের দাবি বিবেচনায় নিতেই পারেন তিনি। কিন্তু তেমন কিছু হলে তাকে রাজনৈতিকভাবে বড় বিপদে পড়তে হতে পারে, বিরোধ বাড়তে পারে আদালতের সঙ্গেও।
গত দুই বছর ধরে হওয়া প্রায় সব জরিপে আগামী নির্বাচনে নেতানিয়াহু জোটের হারের সম্ভাবনাই বেশি দেখা যাচ্ছে।