জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে জাতীয় ঐক্যে পৌঁছাতে সর্বদলীয় বৈঠকের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার; এরই মধ্যে দলগুলোর কাছে খসড়া পাঠানোও শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির দাবি অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ হওয়ার সুযোগ থাকছে না। খবর বিডিনিউজ’র
গতকাল মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “গত ১২/১৩ দিন ছাত্রদের ঘোষণাপত্র অনুকরণে একটা ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। সবার সাথে আমাদের কথা বলা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত, নারী সংগঠন, শিক্ষক সংগঠন বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে, ছাত্রদের সাথে আমরা কথা বলেছি।
“তারা সবাই প্রক্লেমেশনের বিষয়ে একমত আছেন যে ঘোষণাপত্রটি দিতে হবে। কিন্তু ঘোষণাপত্রটি কবে এবং এর ভিতরে কী কী কন্টেন্ট থাকবে সে বিষয়ে আমরা ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। আগামী বৃহস্পতিবার আশা করি সবাই মিলে একটা সর্বদলীয় বৈঠক হবে।” তার আশা ওই বৈঠকে সবাই এ নিয়ে একমত হতে পারবেন।
মাহফুজ বলেন, “সরকার কীভাবে ঘোষণাপত্রটি জারি করবে সেটা বৈঠকের মাধ্যমে স্পষ্ট হবে। আশা করি বাংলাদেশের জনগণের ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে তাদের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হবে।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। গত ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা। বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচিও দেয় তারা।
এ বিষয়ে ২৯ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহব্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নাৎসি বাহিনীর মত অপ্রাসঙ্গিক এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।”
প্রথমে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত না হলেও পরে এ প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানায়। তখন ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি বদল করে সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
পরে সরকার ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ শুরু করে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শুরুর কথা বলেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর দিক থেকে এ নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই। এমন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠকের ঘোষণা এল।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সেই বৈঠকে সব রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি থাকবে। সেখানে ছাত্রদের নেতৃত্ব থাকবে ৫ অগাস্টের মত। সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও থাকতে পারেন।”
ঘোষণাপত্রে নিয়ে মতামত জানাতে বিএনপি যে সময় চাচ্ছে সেটি নিয়ে তিনি বলেন, “আমরাও চাই এরইমধ্যে সবগুলো রাজনৈতিক দল এটা নিয়ে আলোচনা করুক, এরপর বসুক। বসে কথা বললেই এটা আমরা স্পষ্ট হতে পারব যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। এবং কতটুকু যোগ-বিয়োগ করতে হবে। আমরা মনে করি এটা সম্ভব, এটা হয়ে যাবে।”
উপদেষ্টা বলেন, “সরকারের দিক থেকে এই ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে একটি লিগ্যাল ডকুমেন্ট প্রস্তুতের আলোচনা আছে। এটা অনেক আগ থেকে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা মনে করি এটা জনগণের দিক থেকে আগে আসুক। সেটার সূত্র ধরে আমরা করব।”