জুলাইয়ে আমিই প্রথম যুদ্ধ চালু করি

0

পূর্বদেশ ডেস্ক

ক্যাসিনোকান্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে গুলশান থানার সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমানের আদালত গতকাল বুধবার শুনানি নিয়ে আদেশ দিয়েছে। শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন সেলিম প্রধান। নিজেকে কেবলই ব্যবসায়ী দাবি করে আওয়ামী লীগ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। জুলাই আন্দোলনেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে আদালতে দাবি করেন।
আদালতে দুই মিনিট কথা বলার অনুমতি পান সেলিম প্রধান। রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের পর তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই যে প্রমাণ করতে পারবে, পৃথিবীর কোনো ব্যক্তির জন্ম হয় নাই বলতে পারবে সেলিম প্রধান কোনো অপরাধ করেছে। আমি ব্যবসায়ী। ব্যবসা করতে দেন নাই। খবর বিডিনিউজের।
আমি সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। রূপগঞ্জে আমি গাজীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সেই গাজীর লোক এখনো রুপগঞ্জে আছে। তারা এখনো সেই ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। জুলাই মাসে আমিই প্রথম যুদ্ধ চালু করি। প্রতিদিন রাস্তায় ছিলাম।
তিনি বলেন, আমি প্রফেসর ইউনুসকে দেখেছি। আমি চাই, বাংলাদেশ ভালো হোক। পুলিশ ও কিছু লোকজন ভালো না হলে আমাদের কোনো উন্নতি হবে না। উনি (রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী) এ জায়গায় (আদালতে) দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা বলেন। শামীম ওসমানকে গালাগালি করেছি আমি। এরা একটা চক্র। আমি সন্ত্রাসী না। রূপগঞ্জের সন্ত্রাস আমি তাড়িয়েছি। সেলিম প্রধানের এ বক্তব্যের পর বিচারক বলেন, জামিন শুনানির সময় আপনি এসব কথা বলবেন।”
এরপর আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেয়। আদেশের পর কাঠগড়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন সেলিম প্রধান। এরপর তাকে পানি দেওয়া হয়। কিছুটা সুস্থ হলে তাকে আবার কারাগারে নেওয়া হয়।
রাজধানীর বারিধারায় সীসা বার পরিচালনার অভিযোগে গত ৬ সেপ্টেম্বর সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশের গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আল আমিন হোসাইন তখন বলেন, তিনি অবৈধভাবে সীসা বার পরিচালনা করছিলেন।
সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার দেখানো গুলশান থানার মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২২ এপ্রিল সকালে গুলশান-১ এর জব্বার টাওয়ারের পাশে ৩০/৩৫ জন নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনে বলা হয়, সেলিম প্রধান গুলশানে মিছিলকারীদের ‘অর্থ যোগানদাতা, পরামর্শদাতা ও নির্দেশদাতা’ হিসেবে সক্রিয় দেশ বিরোধী প্রচারে অংশ নেন। তিনি ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত’ সংগঠনের সক্রিয় সদস্য বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, সেলিম প্রধান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। তার ঘনিষ্ঠ লোকজন যারা ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত’ সংগঠনের প্রভাবশালী নেতাকর্মী, তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। এ অবস্থায় মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামিকে পরবর্তীতে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হতে পারে। ফলে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে রাখা একান্ত প্রয়োজন।
সেলিম প্রধান ‘প্রধান গ্রুপ’ নামে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের চেয়ারম্যান। এই গ্রুপের অধীনে পি২৪ গেইমিং নামের একটি কোম্পানি আছে, যারা ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিয়ে ক্যাসিনো ও অনলাইন ক্যাসিনোর কারবার চালিয়ে আসছিল।
২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সেলিম প্রধানকে আটকের পর তার রাজধানীর গুলশান-বনানীর বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়েছিল র‌্যাব। ওই অভিযানে ২৯ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।
ওই বাসায় দুটি হরিণের চামড়া পাওয়ায় সেলিম প্রধানকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে তাৎক্ষণিকভাবে ছয় মাসের কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দীর্ঘ চার বছর কারাগারে থাকার পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে জামিনে মুক্তি পান সেলিম প্রধান।
পটপরিবর্তনের পর গত জুনে আত্মপ্রকাশ করা বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি-বিআরপির প্রধান উপদেষ্টা হন সেলিম প্রধান।