জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ দেশে সংকট তৈরি করবে

2

জাপানের মেগাব্যাংক সুমিতোমো মিতসুই ব্যাংকিং করপোরেশন (এসএমবিসি) কর্তৃক জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ১৮৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সংকট তৈরি করবে। এসএমবিসি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতকে পরিবেশ ও অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই এসএমবিসিকে এই জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বিনিয়োগ বন্ধ করে, ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে ক্ষতিপূরণ দেয়া, নেট জিরো ব্যাংকিং এলায়েন্সে পুনরায় যুক্ত হয়ে এবং বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানান। গতকাল চট্টগ্রামে এক জনসমাগমপূর্ণ প্রচারণা কর্মসূচিতে আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্লিন (ক্লিন) এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) উপরোক্ত দাবি জনান।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ক্লিন প্রকাশিত সাম্প্রতিক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এসএমবিসি ইতোমধ্যে কয়লা, এলএনজি ও এইচএফও ভিত্তিক প্রকল্পে ২৩৮.৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই অর্থায়নে ২,২১৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার জীবাশ্মভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং একটি ৫০০ এমএমসিএফডি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ হয়েছে। অথচ এসএমবিসি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে একটি প্রকল্পেও এক টাকাও বিনিয়োগ করেনি।
বিডব্লিউজিইডি’র সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, এসএমবিসি-সমর্থিত প্রকল্পগুলো সরকারের উপর দীর্ঘমেয়াদী ক্যাপাসিটি পেমেন্টের দায় চাপিয়েছে এবং একের পর এক স্ট্র্যান্ডেড অ্যাসেট তৈরি করেছে। মাত্র ছয় বছরে সামিট এলএনজি টার্মিনাল ও গাজীপুর-২ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প দুটির পেছনে সরকার ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ৬,৩৫৫ কোটি টাকা (৬৫৪ মিলিয়ন ডলার) খরচ করেছে। চলমান ১৫ বছরের চুক্তি অনুযায়ী এই প্রকল্পগুলো থেকে মোট ২০,১২৯ কোটি টাকা (১.৮৬ বিলিয়ন ডলার) আদায় করা হবে, অথচ এই প্রকল্পগুলো থেকে টেকসই বা নির্ভরযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন বলেন, এসএমবিসি যখন জীবাশ্মজ্বালানি অবকাঠামোর পক্ষে অব্যাহত সহায়তা দিচ্ছে, তখন এটি শুধু জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে না, বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক দুরবস্থাও বাড়াচ্ছে। এসএমবিসিকে এখনই সুষ্ঠু ও টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে হবে।
বক্তারা বলেন, এসএমবিসি বাংলাদেশে কোনো শাখা না থাকা সত্ত্বেও বিদেশি আর্থিক শক্তির সহায়তায় এ দেশের জ্বালানি খাতে ভয়াবহ কার্বন নিঃসরণ ও আর্থিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। ব্যয়বহুল মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আর্থিক পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছে এসএমবিসি এবং সামিট এলএনজি টার্মিনাল, গাজীপুর-২ এইচএফও বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মেঘনাঘাট এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্রেও অর্থায়ন করেছে। এই প্রকল্পগুলো প্রায়শই কাঙ্খিত উৎপাদনক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে এবং বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করছে।
যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সংহতি জানান চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, এডাব চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট নারীনেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও পিআইজি চট্টগ্রামের সভাপতি মহাম্মদ মুসা খান, দৈনিক পূর্বদেশ এর বার্তা সম্পাদক আবু মোশাররফ রাসেল, বাংলাদেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেলস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল চট্টগ্রাম মহানগরের সহ-সভাপতি সায়মা হক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর জেসমিনা খানম, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফরিদা খানাম, ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট চট্টগ্রামর সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, সুবজের যাত্রা নির্বাহী পরিচালক সায়রা বেগম, পিআইজি গ্রুপ নেতা অধ্যাপক মোকতার আহমদ, যুব ক্যাব নেতা সাজ্জাদ উদ্দীন, বাংলানিউজের প্রতিনিধি আল রাহমান, অধিকার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ওসমান জাহাঙ্গীর, চান্দগাঁও ল্যাবরেটরি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি ইসমাইল ফারুকী, প্রাইম ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ আবু ইউনুচ, আইএসডিই বাংলাদেশের ক্যাব আইএসডিই বাংলাদেশের কর্মসূচি কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম, যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের প্রচার সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম, সিরাতুল মুনতাহা, তানিয়া সুলতানা প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি