‘জীবন বদলে দেওয়ার গল্প’ শোনালেন ইউনূস

5

দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কীভাবে ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে তুলে আনা যায়, তাদের জীবনের পরিবর্তন ঘটানো যায়, কাতারের দোহায় আর্থনা সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনে সেই গল্প তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মঙ্গলবার ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আজ আমি সামাজিক ব্যবসা ও ক্ষুদ্রঋণে সরাসরি নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরব, যা আমার নিজ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্যন্নোয়ন ঘটিয়েছে। তাদের জামানতহীন ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার পর দেখা গেছে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম মানুষের জীবনধারণ, জীবিকা বা আয়ের উৎস তৈরি করেছে। এর ফলে ঋণগ্রহীতা ও পরিবার দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে।’ খবর বিডিনিউজের।
কাতারে প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বে ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে জীবন বদলে ফেলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দরিদ্রতা গরীব মানুষের তৈরি নয়। এটি একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার ফল, যেখানে সম্পদ ঊর্ধ্বমুখী হয়। সম্পদ আরও সংকীর্ণভাবে কেন্দ্রীভূত হয়। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক ব্যবসা সেই ফাঁদ ভাঙতে পারে এবং লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে পারে।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ইউনূস বলেন, ক্ষুদ্রঋণের সফলতার অনেক রেকর্ড আছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামীণ ব্যাংকের অগ্রণী ভূমিকায় সেটি ঘটেছে। বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গ্রামের দারিদ্র্য মানুষকে বিশেষ করে নারীদের জামানতবিহীন ক্ষুদ্র ঋণ দিয়েছে। এটি বিশ্বের ৩০ কোটি মানুষের ক্ষমতায়ন করেছে তাদের নিজেদের উদ্যোক্তার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে।
তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক বছরে ৯০ লাখ নারীকে ২৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে, যেখানে ঋণ পরিশোধের হার ৯৯ শতাংশ। ক্ষুদ্র ঋণের এই মডেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুসরণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এরকম ঋণ দেয় গ্রামীণ আমেরিকা। সেখানে নিম্ন আয়ের ৮৬ হাজার নারীকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হয়েছে। ঋণ পরিশোধের পরিমাণও ৯৯ শতাংশের বেশি।
কাতারের আর্থনা সম্মেলনে বিশ্বে ক্ষুদ্রঋণে ভাগ্য বদলানোর বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।
আর্থনা সম্মেলন ঘিরে চার দিনের সফরে সোমবার কাতারে যান প্রধান উপদেষ্টা। সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি এ সফরে কাতারের সঙ্গে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কাতার থেকে এলএনজি আমদানি ব্যয়ের শত শত মিলিয়ন মার্কিন ডলার দীর্ঘদিন পরিশোধ করেনি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই দেনা পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজির দেনার বড় অংশ পরিশোধ করেছে। এখনও আমদানির ৩৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ হয়নি, যা আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে পরিশোধ করবে সরকার।