জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাখালেদা-তারেকসহ সব আসামি খালাস

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ সবাই খালাস পেয়েছেন। গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। মামলাটি ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ উল্লেখ করে রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে আপিলকারী এবং যারা আবেদন করতে পারেননি, তারা যে নির্দোষ ছিলেন, তা আবারও প্রতিষ্ঠিত হবে।
পর্যবেক্ষণসহ মামলার রায়ে আদালত বলেছেন, সর্বসম্মতিক্রমে সবার আপিল মঞ্জুর করা হলো। সেইসঙ্গে হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করা হলো। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়া হলো। মামলাটি বিদ্বেষপূর্ণ বলে গণ্য হলো। যারা আপিল করেননি, এই রায় তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।এরমধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যক্রমের অবসান ঘটবে বলেও উল্লেখ করেন আপিল বিভাগ।
এর আগে গত ২৭ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে খালাস দেওয়া হয়। এর ফলে আওয়ামী লীগ আমলে দুই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন দুটোতেই নির্দোষ প্রমাণিত হলেন। ফলে তার নির্বাচন করার আর বাধা থাকল না। খবর বিডিনিউজের।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আমিনুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন অসীম, মাহবুবুর রহমান খান, জাকির হোসেন, ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, সানজিদ সিদ্দিকী, মাকসুদ উল্লাহ, আজমল হোসেন খোকন।
দুদকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আসিফ হোসাইন এবং রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
আসামিপক্ষের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালত চত্বরে বলেন, মামলাটা এতোটা বিদ্বেষপূর্ণ ছিল যে, যারা আপিল করেছে এবং যারা আপিল করতে পারেনি-সবাইকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় যে বেল বন্ড দেওয়া হয়েছিল সেগুলোও আর থাকল না।
আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সাধারণত আপিল অ্যালাও করা হলে হাই কোর্টের রায় বাতিল করা হয়। এই মামলা এতটাই বিদ্বেষপূর্ণ ছিল আদালত হাই কোর্ট এবং বিচারিক আদালত- দুই রায়ই বাতিল ঘোষণা করেছেন।
আদালত এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ ঘোষণা করে বলেছে যে, ‘এই মামলায় আপিলকারীদের যে সম্মানহানি ঘটেছে তার একটা চিরসমাপ্তি ঘটবে; এবং তাদের ইনোসেন্সটা পুনরুজ্জীবিত হবে।
আদলত প্রত্যাশা করেন, এ ধরনের ‘ম্যালিশাস’ প্রসিকিউশন আর কখনও কেউ করবে না। এটি একটি ঐতিহাসিক রায় এবং বাংলাদেশের আদালতে এ রায় যুগ যুগ ধরে রেফারেন্স হিসেবে থাকবে।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে বলতেন যে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। আজ এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইনোসেন্ট। সর্বোচ্চ আদালত বলেছে- ফাউন্ড নট গিলটি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন। একইসঙ্গে তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়।
ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেছিলেন খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল এবং ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। দন্ডিত অপর তিনজন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক থাকায় আপিল করতে পারেননি।
এদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকও হাই কোর্টে আবেদন করে। দুই আবেদনের শুনানি করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ খালেদা জিয়াসহ আসামিদের আপিল আবেদন খারিজ করে দেয়। আর দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করে।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। সরকার পরিবর্তনের পর সেই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ১০ নভেম্বর আপিল বিভাগ তার সাজা স্থগিত করে আপিলের অনুমতি দেয়।