জামায়াত নেতাদের ভোটভাগ্য নির্ধারণে তিন দিন সময়

44

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতা বাতিলের পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনে করা আবেদন তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর ২৫ নেতার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেয়।
প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রিট আবেদনকারীদের নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে বললে জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতা বাতিলে পদক্ষেপ নিতে সোমবার নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন রিট আবেদনকারীরা।
মঙ্গলবার ইসি প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রাথমিক শুনানির পর সেই আবেদনটি তিনদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
রিটকারী পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম। খবর বিডিনিউজের
হাই কোর্টের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি উল্লেখ করে রিটকারীদের আবেদনে বলা হয়েছে, ইদানিং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন প্রার্থী তাদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নমিনেশন পেপার জমা দেন, যা অত্র ইলেকশন কমিশন কৃর্তৃক গৃহীত হয় এবং তাদেরকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে, যা আইনগত বৈধ নয়।
২০০৮ সালের ১ অগাস্ট তরিকত ফেডারেশনের দায়ের করা এক রিট মামলার রায়ে হাই কোর্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে।
নিবন্ধন বাতিল হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এ দলের নেতারা এবার তাদের জোটসঙ্গী বিএনপির মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন। স্বতন্ত্র হিসেবেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন কয়েকজন।
ওই ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়ার আরজি জানিয়ে আবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইট থেকে তাদের রাজনৈতিক দলের ২৫ জন প্রার্থীর তথ্য-উপাত্ত এবং তদসংক্রান্তে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট দাখিল পূর্বক আপনার নিকট সবিনয়ে নিবেদন করছি, রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উক্ত ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলপূর্বক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আপনার সদয় মর্জি হয় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রার্থনা করছি।
আবেদনকারীরা হলেন- বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপূরী, সমাজকল্যাণ সচিব শাহ মোহাম্মদ আলী হুসাইন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ এর সভাপতি হুমায়ুন কবির ও সংগঠনটির সভাপতি মন্ডলির সদস্য মো. এমদাদুল হক।
জামায়াত নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা চেয়ে হাই কোর্টে তারাই আবেদন করেন।
আবেদনে জামায়াতের ২৫ প্রার্থীসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশন সচিব, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সেক্রেটারি জেনারেল ও আমিরকে বিবাদি করা হয়েছে।
জামায়াত নেতাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিয়ে রুল চাওয়া হয় রিটে।
এছাড়া রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ওই ২৫ প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত চাওয়া হয় রিটে।
রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর সোমবার শুনানিতে বলেন, জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে ২০০৯ সালে রিট করা হয়। ওই রিটের ওপর জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৩ সালে হাই কোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করে।
হাই কোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১)(বি) (২) ও ৯০সি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবিধানপরিপন্থি। সেই রায় এখনও বহাল আছে।
তানিয়া বলেন, যেহেতু জামায়াতের নিবন্ধন নেই, তাই ওই দলের কোনো নেতা নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে পারছেন না। যেহেতু নিজস্ব প্রতীকে পারছেন না, সেহেতু অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণেরও সুযোগ নেই।
এরপরেও জামায়াতের নেতাদের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে ইসি হাই কোর্টের রায় ও গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের বিভিন্ন বিধির সঙ্গে প্রতারণা, প্রবঞ্চনা করেছে।
বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে জামায়াতের ২২ জন নেতা এবার ভোটের মাঠে রয়েছেন।
এরা হলেন- ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে রফিকুল ইসলাম খান, খুলনা-৬ আসনে আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-১১ আসনে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, খুলনা-৫ আসনে মিয়া গোলাম পারোয়ার, পাবনা-৩ আনোয়ারুল ইসলাম, পাবনা-৫ আসনে ইকবাল হোসাইন, যশোর-২ আসনে আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হোসাইন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আসনে আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আসনে আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ আসনে আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ আসনে মাজেদুর রহমান, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ আসনে শামীম সাঈদী, নীলফামারী-২ আসনে মো. মনিরুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৩ মতিয়ার রহমান, বাগেরহাট-৩ আসনে ওয়াদুল শেখ, বাগেরহাট-৪ আসনে আব্দুল আলীম ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনে শামসুল ইসলাম।
জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ কক্সাবাজার-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে বিএনপি অন্য কোনো প্রার্থী দেয়নি।
এছাড়া জামায়াতের নূরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, জহিরুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৬ এবং ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান পাবনা-১ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন।